অতএব সহজেই ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে যে, আমাদের ছড়ার মধ্যেও বঙ্গজননীর এই মর্মব্যথা নানা আকারে প্রকাশ পাইয়াছে।
আজ দুর্গার অধিবাস, কাল দুর্গার বিয়ে।
দুর্গা যাবেন শ্বশুরবাড়ি সংসার কাঁদিয়ে।
মা কাঁদেন মা কাঁদেন ধুলায় লুটায়ে।
সেই যে-মা পলাকাটি দিয়েছেন গলা সাজায়ে।
বাপ কাঁদেন বাপ কাঁদেন দরবারে বসিয়ে।
সেই যে-রাপ টাকা দিয়েছেন সিন্দুক সাজায়ে।
মাসি কাঁদেন মাসি কাঁদেন হেঁশেলে বসিয়ে।
সেই যে-মাসি ভাত দিয়েছেন পাথর সাজিয়ে।
পিসি কাঁদেন পিসি কাঁদেন গোয়ালে বসিয়ে।
সেই যে-পিসি দুধ দিয়েছেন বাটি সাজিয়ে।
ভাই কাঁদেন ভাই কাঁদেন আঁচল ধরিয়ে।
সেই যে-ভাই কাপড় দিয়েছেন আলনা সাজিয়ে
বোন কাঁদেন বোন কাঁদেন খাটের খুরো ধ’রে।
সেই যে-বোন—
এইখানে, পাঠকদিগের নিকট অপরাধী হইবার আশঙ্কায় ছড়াটি শেষ করিবার পূর্বে দুই-একটি কথা বলা আবশ্যক বোধ করি। যে-ভগিনীটি আজ খাটের খুরা ধরিয়া দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া অজস্র অশ্রুমাচন করিতেছেন, তাঁহার পূর্বব্যবহার কোনো ভদ্রকন্যার অনুকরণীয় নহে। বোনে বোনে কলহ না হওয়াই ভালো, তথাপি সাধারণত এরূপ কলঙ্ক নিত্য ঘটিয়া থাকে। কিন্তু তাই বলিয়া কন্যাটির মুখে এমন ভাষা ব্যবহার হওয়া উচিত হয় না, যাহা আমি অদ্য ভদ্রসমাজে উচ্চারণ করিতে কুণ্ঠিত বোধ করিতেছি। তথাপি সে-ছত্রটি একেবারেই বাদ দিতে পারিতেছি না। কারণ, তাহার মধ্যে কতকটা ইতর ভাষা আছে বটে কিন্তু তদপেক্ষা অনেক অধিক পরিমাণে বিশুদ্ধ করুণরস