পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাব্যের তাৎপর্য
১৯৯

গ্রহণ, গুটি কাটিয়া ফেলিয়া প্রজাপতির পলায়ন, ফুলকে বিশীর্ণ করিয়া ফলের বহিরাগমন, বীজকে বিদীর্ণ করিয়া অঙ্কুরের উদ্গম, এমন রাশি রাশি তাৎপর্য স্তূপাকার করা যাইতে পারে।”

 ব্যোম গম্ভীরভাবে কহিতে লাগিল, “ঠিক বটে। ওগুলা তাৎপর্য নহে, দৃষ্টান্ত মাত্র। উহাদের ভিতরকার আসল কথাটা এই, সংসারে আমরা অন্তত দুই পা ব্যবহার না করিয়া চলিতে পারি না। বাম পদ যখন পশ্চাতে আবদ্ধ থাকে দক্ষিণ পদ সম্মুখে অগ্রসর হইয়া যায়, আবার দক্ষিণ পদ সম্মুখে আবদ্ধ হইলে পর বাম পদ আপন বন্ধন ছেদন করিয়া অগ্রে ধাবিত হয়। আমরা একবার করিয়া আপনাকে বাঁধি, আবার পরক্ষণেই সেই বন্ধন ছেদন করি। আমাদিগকে ভালোবাসিতেও হইবে এবং সে-ভালোবাসা কার্টিতেও হইবে,— সংসারের এই মহত্তম দুঃখ, এবং এই মহৎ দুঃখের মধ্য দিয়াই আমাগিকে অগ্রসর হইতে হয়। সমাজ সম্বন্ধেও এ-কথা খাটে। নূতন নিয়ম যখন কালক্রমে প্রাচীন প্রথারূপে আমাদিগকে একস্থানে আবদ্ধ করে, তখন সমাজবিপ্লব আসিয়া তাহাকে উৎপাটনপূর্বক আমাদিগকে মুক্তি দান করে। যে-পা ফেলি সে-পা পরক্ষণে তুলিয়া লইতে হয়, নতুবা চলা হয় না—অতএব অগ্রসর হওয়ার মধ্যে পদে পদে বিচ্ছেদবেদনা—ইহা বিধাতার বিধান।”

 সমীর কহিল, “গল্পটার সর্বশেষে যে একটি অভিশাপ আছে তোমরা কেহ সেটার উল্লেখ করো নাই। কচ যখন বিদ্যা লাভ করিয়া দেবযানীর প্রেমবন্ধন বিচ্ছিন্ন করিয়া যাত্রা করেন তখন দেবযানী তাঁহাকে অভিশাপ দিলেন যে, তুমি যে-বিদ্যা শিক্ষা করিলে সে-বিদ্যা অন্যকে শিক্ষা দিতে পারিবে কিন্তু নিজে ব্যবহার করিতে পারিবে না;— আমি সেই অভিশাপ-সমেত একটা তাৎপর্য বাহির করিয়াছি, যদি ধৈর্য থাকে তো বলি।”

 ক্ষিতি কহিল, “ধৈর্য থাকিবে কি না পূর্বে হইতে বলিতে পারি না,