পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্য

 শীতের সকালে রাস্তা দিয়া খেজুররস হাঁকিয়া যাইতেছে। ভোরের দিককার ঝাপ্‌সা কুয়াশাটা কাটিয়া গিয়া তরুণ রৌদ্রে দিনের আরম্ভ বেলাটা একটু উপভোগযোগ্য আতপ্ত হইয়া আসিয়াছে। সমীর চা খাইতেছে, ক্ষিতি খবরের কাগজ পড়িতেছে এবং ব্যোম মাথার চারিদিকে একটা অত্যন্ত উজ্জ্বল নীলে সবুজে মিশ্রিত গলাবন্ধের পাক জড়াইয়া একটা অসংগত মোটা লাঠি হস্তে সম্প্রতি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে।

 অদূরে দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া স্রোতস্বিনী এবং দীপ্তি পরস্পরের কটিবেষ্টন করিয়া কী-একটা রহস্যপ্রসঙ্গে বারম্বার হাসিয়া অস্থির হইতেছিল। ক্ষিতি এবং সমীর মনে করিতেছিল, এই উৎকট নীলহরিত-পশমরাশি-পরিবৃত সুখাসীন নিশ্চিন্তচিত্ত ব্যোমই ঐ হাস্য-রসোচ্ছ্বাসের মূল কারণ।

 এমন সময় অন্যমনস্ক ব্যোমের চিত্তও সেই হাস্তরবে আকৃষ্ট হইল। চৌকিটা সে আমাদের দিকে ঈষৎ ফিরাইয়া কহিল, “দূর হইতে একজন পুরুষমানুষের হঠাৎ ভ্রম হইতে পারে যে, ঐ দুটি সখী বিশেষ কোনো একটা কৌতুককথা অবলম্বন করিয়া হাসিতেছেন, কিন্তু সেটা মায়া। পুরুষজাতিকে পক্ষপাতী বিধাতা বিনাকৌতুকে হাসিবার ক্ষমতা দেন নাই, কিন্তু মেয়েরা হাসে কিজন্য, তাহা ‘দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ’। চক্‌মকি-পাথর স্বভাবত আলোকহীন, উপযুক্ত সংঘর্ষ প্রাপ্ত হইলে সে অট্টশব্দে জ্যোতিস্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করে; আর মানিকের টুক্‌রা আপনা-আপনি আলোয় ঠিকরিয়া পড়িতে থাকে— কোনো-একটা