পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
সংকলন

তাহার মধ্যে বুদ্ধিমানের বুদ্ধিভ্রংশও একটি। যে-অবস্থায় আমাদের ফিলজফি প্রলাপ হইয়া উঠিয়াছিল, সে অবস্থায় নিশ্চয়ই মনে করিলেই কবিতা লিখিতেও পরিতাম, এবং গলায় দড়ি দেওয়াও অসম্ভব হইত না।

 যাহা হউক, সেদিন মোটের উপরে আমরা প্রশ্নটা এই তুলিয়াছিলাম যে, যেমন দুঃখের কান্না তেমনি সুখের হাসি আছে, কিন্তু, মাঝে হইতে কৌতুকের হাসিটা কোথা হইতে আসিল। কৌতুক জিনিসটা কিছু রহস্যময়। জন্তুরাও সুখ দুঃখ অনুভব করে, কিন্তু কৌতুক অনুভব করে না। অলংকারশাস্ত্রে যে-কটা রসের উল্লেখ আছে সব রসই জন্তুদের অপরিণত অপরিস্ফুট সাহিত্যের মধ্যে আছে, কেবল হাস্যরসটা নাই। হয়তো বানরের প্রকৃতির মধ্যে এই রসের কঞ্চিৎ আভাস দেখা যায়, কিন্তু বানরের সহিত মানুষের আরো অনেক বিষয়েই সাদৃশ্য আছে।

 যাহা অসংগত, তাহাতে মানুষের দুঃখ পাওয়া উচিত ছিল, হাসি পাইবার কোনো অর্থই নাই। পশ্চাতে যখন চৌকি নাই তখন চৌকিতে বসিতেছি মনে করিয়া কেহ যদি মাটিতে পড়িয়া যায়, তবে তাহাতে দর্শকবৃন্দের সুখানুভব করিবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখা যায় না। এমন একটা উদাহরণ কেন, কৌতুকমাত্রেরই মধ্যে এমন একটা পদার্থ আছে যাহাতে মানুষের সুখ না হইয়া দুঃখ হওয়া উচিত।

 আমরা কথায় কথায় সেদিন ইহার একটা কারণ নির্দেশ করিয়াছিলাম। আমরা বলিয়াছিলাম, কৌতুকের হাসি এবং আমোদের হাসি একজাতীয়, উভয় হাস্যের মধ্যেই একটা প্রবলতা আছে। তাই আমাদের সন্দেহ হইয়াছিল যে, হয়তো আমোদ এবং কৌতুকের মধ্যে একটা প্রকৃতিগত সাদৃশ্য আছে; সেইটে বাহির করিতে পারিলেই কৌতুকহাস্যের রহস্যভেদ হইতে পারে।

 সাধারণভাবে সুখের সহিত আমোদের একটা প্রভেদ আছে।