পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
সংকলন

আছে। অনেক সময় আমরা যাহাকে লইয়া হাসি সে নিজের অবস্থাকে হাস্যের বিষয় জ্ঞান করে না। এইজন্যই পাঞ্চভৌতিক সভায় ব্যোম বলিয়াছিলেন যে, কমেডি এবং ট্র্যাজেডি কেবল পীড়নের মাত্রাভেদ। কমেডিতে যতটুকু নিষ্ঠুরতা প্রকাশ হয় তাহাতে আমাদের হাসি পায় এবং ট্র্যাজেডিতে যতদূর পর্যন্ত যায় তাহাতে আমাদের চোখে জল আসে। গর্দভের নিকট অনেক টাইটিনিয়া অপূর্ব মোহবশত যে আত্মবিসর্জন করিয়া থাকে, তাহা মাত্রাভেদে এবং পাত্রভেদে মর্মভেদী শোকের কারণ হইয়া উঠে।

 অসংগতি কমেডিরও বিষয়, অসংগতি ট্র্যাজেডিরও বিষয়। কমেডিতেও ইচ্ছার সহিত অবস্থার অসংগতি প্রকাশ পায়। ফল্‌স্টাফ উইণ্ড্‌সর-বাসিনী রঙ্গিণীর প্রেমলালসায় বিশ্বস্তচিত্তে অগ্রসর হইলেন, কিন্তু দুর্গতির একশেষ লাভ করিয়া বাহির হইয়া আসিলেন। রামচন্দ্র যখন রাবণবধ করিয়া, বনবাস-প্রতিজ্ঞা পূরণ করিয়া, রাজ্যে ফিরিয়া আসিয়া দাম্পত্যসুখের চরমশিখরে আরোহণ করিয়াছেন, এমন সময় অকস্মাৎ বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হইল, গর্ভবর্তী সীতাকে অরণ্যে নির্বাসিত করিতে বাধ্য হইলেন। উভয় স্থলেই আশার সহিত ফলের, ইচ্ছার সহিত অবস্থার অসংগতি প্রকাশ পাইতেছে। অতএব স্পষ্ট দেখা যাইতেছে, অসংগতি দুই শ্রেণীর আছে; একটা হাস্যজনক, আর-একটা দুঃখজনক। বিরক্তিজনক, বিস্ময়জনক, রোষজনককেও আমরা শেষ শ্রেণীতে ফেলিতেছি।

 অর্থাৎ, অসংগতি যখন আমাদের মনের অনতিগভীর স্তরে আঘাত করে তখনই আমাদের কৌতুক বোধ হয়, গভীর স্তরে আঘাত করিলে আমাদের দুঃখ বোধ হয়। শিকারী যখন অনেকক্ষণ অনেক তাক করিয়া হংসভ্রমে একটা দূরস্থ শ্বেত পদার্থের প্রতি গুলি বর্ষণ করে এবং ছুটিয়া কাছে গিয়া দেখে সেটা ছিন্ন বস্ত্রখণ্ড, তখন তাহার সেই