পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
সংকলন

 দিনের পর দিন আসে, আমার কাছে তাহারা কিছুই দাবি করে না; তখন হিসাবের অঙ্কে ভুল হয় না, তখন সকল কাজই সহজে করা যায়। জীবনটা তখন এক দিনের সঙ্গে আর-এক দিন, এক কাজের সঙ্গে আর-এক কাজ দিব্য গাঁথিয়া গাঁথিয়া অগ্রসর হয়, সমস্ত বেশ সমানভাবে চলিতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ কোনো খবর না দিয়া একটা বিশেষ দিন সাতসমুদ্রপারের রাজপুত্রের মতো আসিয়া উপস্থিত হয়, প্রতিদিনের সঙ্গে তাহার কোনো মিল হয় না— তখন মুহূর্তের মধ্যে এতদিনকার সমস্ত খেই হারাইয়া যায়— তখন বাঁধা কাজের পক্ষে বড়োই-মুশকিল ঘটে।

 কিন্তু এইদিনই আমাদের বড়ো দিন; এই অনিয়মের দিন, এই কাজ নষ্ট করিবার দিন। যে-দিনটা আসিয়া আমাদের প্রতিদিনকে বিপর্যস্ত করিয়া দেয় সেই দিন আমাদের আনন্দ। অন্য দিনগুলো বুদ্ধিমানের দিন, সাবধানের দিন— আর এক-একটা দিন পুরা পাগলামির কাছে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করা।

 পাগল শব্দটা আমাদের কাছে ঘৃণার শব্দ নহে। খেপা নিমাইকে আমরা খেপা বলিয়া ভক্তি করি— আমাদের খেপা-দেবতা মহেশ্বর। প্রতিভা খেপামির একপ্রকার বিকাশ কি না, এ কথা লইয়া য়ুরোপে বাদানুবাদ চলিতেছে— কিন্তু আমরা এ কথা স্বীকার করিতে কুণ্ঠিত হই না। প্রতিভা খেপামি বই কি, তাহা নিয়মের ব্যতিক্রম, তাহা উলটপালট করিতেই আসে— তাহা আজিকার এই খাপছাড়া সৃষ্টিছাড়া দিনের মতো হঠাৎ আসিয়া যত কাজের লোকের কাজ নষ্ট করিয়া দিয়া যায়— কেহ-বা তাহাকে গালি পাড়িতে থাকে, কেহ-বা তাহাকে লইয়া নাচিয়া-কুঁদিয়া অস্থির হইয়া উঠে।

 ভোলানাথ, যিনি আমাদের শাস্ত্রে আনন্দময়, তিনি সকল দেবতার মধ্যে এমনি খাপছাড়া। সেই পাগল দিগম্বরকে আমি আজিকার এই