পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাগল
২৩৫

জানিয়াছি, সেই কি এই। যে এক দিকে ঘরের, সে আর-এক দিকে অন্তরের; যে এক দিকে কাজের, সে আর-এক দিকে সমস্ত আবশ্যকের বাহিরে; যাহাকে এক দিকে স্পর্শ করিতেছি, সে আর-এক দিকে সমস্ত আয়ত্তের অতীত; যে এক দিকে সকলের সঙ্গে বেশ খাপ খাইয়া গিয়াছে, সে আর-এক দিকে ভয়ংকর খাপছাড়া আপনাতে-আপনি।

 প্রতিদিন যাঁহাকে দেখি নাই আজ তাঁহাকে দেখিলাম, প্রতিদিনের হাত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া বাঁচিলাম। আমি ভাবিতেছিলাম, চারিদিকে পরিচিতের বেড়ার মধ্যে প্রাত্যহিক নিয়মের দ্বারা আমি বাঁধা, আজ দেখিতেছি, মহা-অপূর্বের কোলের মধ্যে চিরদিন আমি খেলা করিতেছি। আমি ভাবিয়াছিলাম, আপিসের বড়োসাহেবের মতো অত্যন্ত একজন সুগম্ভীর হিসাবি লোকের হাতে পড়িয়া সংসারে প্রত্যহ আঁক পাড়িয়া যাইতেছি; আজ সেই বড়োসাহেবের চেয়ে যিনি বড়ো, সেই মস্ত বেহিসাবি পাগলের বিপুল উদার অট্টহাস্য জলে স্থলে আকাশে সপ্তলোক ভেদ করিয়া ধ্বনিত শুনিয়া হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম। আমার খাতাপত্র সমস্ত রহিল পড়িয়া। আমার জরুরি কাজের বোঝা ঐ সৃষ্টিছাড়ার পায়ের কাছে ফেলিয়া দিলাম— তাঁহার তাণ্ডবনৃত্যের আঘাতে তাহা চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া, ধূলি হইয়া, উড়িয়া যাক।

 শ্রাবণ, ১৩১১