পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শরৎ

ইংরেজের সাহিত্যে শরৎ প্রৌঢ়। তার যৌবনের টান সবটা আলগা হয় নাই, ওদিকে তাকে মবণের টান ধরিয়াছে। এখনো সব চুকিয়া যায় নাই, কেবল সব ঝরিয়া যাইতেছে।

 একজন আধুনিক ইংরেজ কবি শরৎকে সম্ভাষণ করিয়া বলিতেছেন, “তোমার ঐ শীতের আশঙ্কাকুল গাছগুলাকে কেমন যেন আজ ভূতেব মতো দেখাইতেছে; হায় রে, তোমার ঐ কুঞ্জবনের ভাঙা হাট, তোমার ঐ ভিজা পাতার বিবাগি হইয়া বাহির হওয়া। যা অতীত এবং যা আগামী তাদের বিষণ্ণ বসরশয্যা তুমি রচিয়াছ। যা-কিছু ম্রিয়মাণ তুমি তাদেরই বাণী, যত-কিছু ‘গতস্য শোচনা’ তুমি তারই অধিদেবতা।

 কিন্তু এ শরৎ আমাদের শরৎ একেবারেই নয়; আমাদের শরতের নীল চোখের পাতা, দেউলে-হওয়া যৌবনের চোখের জলে ভিজিয়া ওঠে নাই। আমার কাছে আমাদের শরৎ শিশুর মূর্তি ধরি আসে। সে একেবারে নবীন। বর্ষার গর্ভ হইতে এইমাত্র জন্ম লইয়া ধরণীধাত্রীর কোলে শুইয়া সে হাসিতেছে।

 তার কাঁচা দেহখানি; সকালে শিউলিফুলের গন্ধটি সেই কচি-গায়ের গন্ধের মতো। আকাশে-আলোকে গাছে-পালায় যা-কিছু রঙ দেখিতেছি, সে তো প্রাণেরই রঙ, একেবারে তাজা।

 প্রাণের একটি রঙ আছে। তা, ইন্দ্রধনুর গাঠ হইতে চুরি-করা লাল নীল সবুজ হলদে প্রভৃতি কোনো বিশেষ রঙ নয়; তা কোমলতার রঙ। সেই রঙ দেখিতে পাই ঘাসে পাতায়, আর দেখি মানুষের গায়ে।