পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মেঘদূত
২৪৩

গেল, কেতকীবনের দীর্ঘনিশ্বাসে আর শালমঞ্জরীর উতলা আত্মনিবেদনে।

 নির্জন দিঘির ধারে নারিকেলবনের মর্মরমুখরিত বর্ষার আপন কথাটিকেই আমার কথা করে নিয়ে প্রিয়ার কানে পৌঁছিয়ে দিক, যেখানে সে তার এলোচুলে গ্রন্থি দিয়ে, আঁচল কোমবে বেঁধে, সংসারের কাজে ব্যস্ত।

8

 বহুদূরের অসীম আকাশ আজ বনরাজিনীলা পৃথিবীর শিয়রের কাছে নত হয়ে পড়ল। কানে-কানে বললে, “আমি তোমাই।”

 পৃথিবী বললে, “সে কেমন করে হবে। তুমি-যে অসীম, আমি যে ছোটো।”

 আকাশ বললে, “আমি তো চারদিকে আমার মেঘের সীমা টেনে দিয়েছি।”

 পৃথিবী বললে, “তোমার-যে কত জ্যোতিষ্কের সম্পদ, আমার তো আলোর সম্পদ নেই।”

 আকাশ বললে, “আজ আমি আমার চন্দ্র সূর্য তারা সব হারিয়ে ফেলে এসেছি, আজ আমার একমাত্র তুমি আছ।”

 পৃথিবী বললে, “আমার অশ্রুভরা হৃদয হাওয়ায় হাওয়ায় চঞ্চল হযে কাঁপে, তুমি-যে অবিচলিত।”

 আকাশ বললে, “আমার অশ্রুও আজ চঞ্চল হয়েছে, দেখতে কি পাওনি। আমার বক্ষ আজ শ্যামল হল তোমার ঐ শ্যামল হৃদয়টির মতো।”

 সে এই ব’লে আকাশপৃথিবীর মাঝখানকার চিরবিরহটাকে চোখের জলের গান দিয়ে ভরিয়ে দিলে।