পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পায়ে-চলার পথ

 এই তো পায়ে-চলার পথ।

 এসেছে বনের মধ্যে দিয়ে মাঠে, মাঠের মধ্যে দিয়ে নদীর ধারে, খেয়াঘাটের পাশে বটগাছতলায়; তার পরে ওপারের ভাঙা ঘাট থেকে বেঁকে চলে গেছে গ্রামের মধ্যে; তার পরে তিসির খেতের ধার দিয়ে, আমবাগানের ছায়া দিয়ে, পদ্মদিঘির পাড় দিয়ে, রথতলার পাশ দিয়ে কোন্ গায়ে গিয়ে পৌঁচেছে জানিনে।

 এই পথে কত মানুষ কেউ-বা আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে, কেউ-বা সঙ্গ নিয়েছে, কাউকে-বা দূর থেকে দেখা গেল; কারো বা ঘোমটা আছে, কারো বা নেই; কেউ-বা জল ভরতে চলেছে, কেউ-বা জল নিয়ে ফিরে এল।

 এখন দিন গিয়েছে, অন্ধকার হয়ে আসে।

 একদিন এই পথকে মনে হয়েছিল আমারই পথ, একান্তই আমার; এখন দেখছি, কেবল একটিবার মাত্র এই পথ দিয়ে চলবার হুকুম নিয়ে এসেছি, আর নয়।

 নেবুতলা উজিয়ে— সেই পুকুরপাড়, দ্বাদশ দেউলের ঘাট, নদীর চর, গোয়ালবাড়ি, ধানের গোলা পেরিয়ে সেই চেনা চাউনি, চেনা কথা, চেনা মুখের মহলে আর একটিবারও ফিরে গিয়ে বলা হবে না ‘এই যে’। এ পথ যে চলার পথ, ফেরার পথ নয়।