পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপযাত্রী
২৮১

দ্বারকর্ণটি হাতে ঠেকল তখন মনে হল, এমন প্রিয়স্পর্শসুখ বহুকাল অনুভব করা হয় নি। দরজা খুলে বেরিয়ে প’ড়ে নিঃসংশয়চিত্তে তার পরবর্তী ক্যাবিনের দ্বারে গিয়ে উপস্থিত। গিয়ে দেখি, আলো জ্বলছে; কিন্তু মেঝের উপর পরিত্যক্ত গাউন পেটিকোট প্রভৃতি স্ত্রীলোকের গাত্রাবরণ বিক্ষিপ্ত। আর অধিক কিছু দৃষ্টিপথে পড়বার পূর্বেই পলায়ন করলুম। প্রচলিত প্রবাদ অনুসারে বারবার তিনবার ভ্রম করবার অধিকার সকলেরই আছে, কিন্তু তৃতীয়বার পরীক্ষা করতে আমার আর সাহস হল না, এবং সেরূপ শক্তিও ছিল না। অবিলম্বে জাহাজের ছাতে গিয়ে উপস্থিত হলুম। সেখানে বিহ্বলচিত্তে জাহাজের কাঠরার ’পরে ঝুঁকে পড়ে আভ্যন্তরিক উদ্‌বেগ একদফা লাঘব করা গেল। তার পরে বহুলাঞ্ছিত অপরাধীর মতো আস্তে আস্তে কম্বলটি গুটিয়ে, তার উপর লজ্জিত নতমস্তক স্থাপন ক’রে একটি কাঠের বেঞ্চিতে শুয়ে পড়লুম।

 কিন্তু, কী সর্বনাশ। এ কার কম্বল। এ তো আমার নয় দেখছি। যে সুখলুপ্ত বিশ্বস্ত ভদ্রলোকটির ঘরের মধ্যে রাত্রে প্রবেশ ক’রে দশ মিনিট কাল অনুসন্ধান কার্যে ব্যাপৃত ছিলুম, নিশ্চয়ই এ তারই। একবার ভাবলুম, ফিরে গিয়ে চুপি চুপি তার কম্বল স্বস্থানে রেখে আমারটি নিয়ে আসি; কিন্তু যদি তার ঘুম ভেঙে যায়। পুনর্বার যদি তার ক্ষমা প্রার্থনা করবার আবশ্যক হয়, তবে সে কি আর আমাকে বিশ্বাস করবে। যদি-বা করে, তবু এক রাত্রের মধ্যে দুবার ক্ষমা প্রার্থনা করলে নিদ্রাকাতর বিদেশীর খ্রীষ্টীয় সহিষ্ণুতার প্রতি অতিমাত্র উপদ্রব করা হবে না কি। আরো একটি ভয়ংকর সম্ভাবনার কথা মনে উদয় হল। দৈববশত দ্বিতীয়বার যে ক্যাবিনের দ্বারে গিয়ে পড়েছিলুম, তৃতীয়বারও যদি ভ্রমক্রমে সেইখানে গিয়েই উপস্থিত হই এবং প্রথম ক্যাবিনের ভদ্রলোকটির কম্বলটি সেখানে রেখে সেখানকার