পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নপত্র
২৯৭

শীতের সকাল

 শিলাইদহ, ফেব্রুয়ারি ১৮৯১। কাছারির পরপারের নির্জন চরে বোট লাগিয়ে বেশ আরাম বোধ হচ্ছে। দিনটা এবং চারিদিকটা এমনি সুন্দর ঠেকছে, সে আর কী বলব। অনেক দিন পরে আবার এই বড়ো পৃথিবীটার সঙ্গে যেন দেখাসাক্ষাৎ হল। সেও বললে ‘এই যে’। আমিও বললুন ‘এই যে’। তার পরে দুজনে পাশাপাশি বসে আছি, আর কোনো কথাবার্তা নেই। জল ছলছল করছে, এবং তার উপরে রোদ্দুর চিক্‌চিক্ করছে, বালির চর ধুধু করছে, তার উপর ছোটো ছোটো বনঝাউ উঠেছে। জলের শব্দ, দুপুর-বেলাকার নিস্তব্ধতার ঝাঁঝাঁ, এবং ঝাউঝোপ থেকে দুটো-একটা পাখির চিক্‌চিক্ শব্দ, সবসুদ্ধ মিলে খুব একটা স্বপ্নাবিষ্ট ভাব। খুব লিখে যেতে ইচ্ছে করছে— কিন্তু আর-কিছু নিয়ে নয়, এই জলের শব্দ, এই রোদ্‌দুরের দিন, এই বালির চর। মনে হচ্ছে, রোজই ঘুরে ফিরে এই কথাই লিখতে হবে। কেননা আমার এই একই নেশা, আমি বার বার এই এক কথা নিয়েই বকি। বড়ো বড়ো নদী কাটিয়ে আমাদের বোটটা একটা ছোটো নদীর মুখে প্রবেশ করছে। দুই ধারে মেয়েরা স্নান করছে, কাপড় কাচছে এবং ভিজে কাপড়ে একমাথা ঘোমটা টেনে জলের কলসি নিয়ে ডান হাত দুলিয়ে ঘরে চলেছে; ছেলেরা কাদা মেখে, জল ছুঁড়ে মাতামাতি করছে; এবং একটা ছেলে বিনা সুরে গান গাচ্ছে— ‘একবার দাদা ব’লে ডাক রে লক্ষ্মণ’। উঁচু পাড়ের উপর দিয়ে অদূরবর্তী গ্রামের খড়ের চাল এবং বাঁশবনের ডগা দেখা যাচ্ছে। ছোটো নদীতে বড়ো বেশি নৌকো নেই; দুটো-একটা ছোটো ডিঙি শুকনো গাছের ডাল এবং কাটকুটো বোঝাই নিয়ে শ্রান্তভাবে ছপ্‌ছপ্ দাঁড় ফেলে চলেছে; ডাঙায় বাঁশের উপর