পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নপত্র
৩০৩

গ্রাম্য সাহিত্য

 পতিসর, ১১ আগস্ট ১৮৯৩। অনেকগুলো বড়ো বড়ো বিলের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে। এই বিলগুলো ভারি অদ্ভুত— কোনো আকার আয়তন নেই, জলে স্থলে একাকার, পৃথিবী সমুদ্রগর্ভ থেকে নতুন জেগে ওঠবার সময় যেমন ছিল। কোথাও কিছু কিনারা নেই— খানিকটা জল, খানিকটা মগ্নপ্রায় ধানখেতের মাথা, খানিকটা শেওলা এবং জলজ উদ্ভিদ ভাসছে— পানকৌড়ি সাঁতার দিচ্ছে, জাল ফেলবার জন্যে বড়ো বড়ো বাঁশ পোঁতা, তারই উপর কটা রঙের বড়ো বড়ো চিল বসে আছে। দ্বীপের মতো অতিদূরে গ্রামের রেখা দেখা যাচ্ছে। যেতে যেতে হঠাৎ আবার খানিকটা নদী। দু ধারে গ্রাম, পাটের খেত এবং বাঁশের ঝাড়, আবার কখন-যে সেটা বিস্তৃত বিলের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে বোঝবার জো নেই।

 ঠিক সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময় যখন একটি গ্রাম পেরিয়ে আসছিলুম, একটা লম্বা নৌকোয় অনেকগুলি ছোকরা ঝপ্ ঝপ্ ক’রে দাঁড় ফেলছিল এবং সেই তালে গান গাচ্ছিল—

যোবতি, ক্যান্ বা কর মন ভারি।
পাবনা থাক্যে আন্যে দেব ট্যাকা দামের মোটরি।

 স্থানীয় কবিটি যে-ভাব অবলম্বন ক’রে সংগীত রচনা করেছেন আমরাও ও-ভাবের ঢের লিখেছি, কিন্তু ইতরবিশেষ আছে। আমাদের যুবতী মন ভারি করলে তৎক্ষণাৎ জীবনটা কিম্বা নন্দনকানন থেকে পারিজাতটা এনে দিতে প্রস্তুত হই। কিন্তু এ অঞ্চলের লোক খুব সুখে আছে বলতে হবে, অল্প ত্যাগস্বীকারেই যুবতীর মন পায়। মোটরি জিনিসটি কী তা বলা আমার সাধ্য নয়; কিন্তু তার দামটাও নাকি পার্শ্বেই উল্লেখ করা আছে; তাতেই বোঝা যাচ্ছে, খুব বেশি দুর্মূল্য