পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
সংকলন

নয়, এবং নিতান্ত অগম্য স্থান থেকেও আনতে হয় না। গানটা শুনে বেশ মজার লাগল—যুবতীর মন ভারি হলে জগতে যে আন্দোলন উপস্থিত হয় এই বিলের প্রান্তেও তার একটা সংবাদ পাওয়া গেল। এ গানটি কেবল অস্থানেই হাস্যজনক কিন্তু দেশকালপাত্রবিশেষে এর যথেষ্ট সৌন্দর্য আছে; আমার অজ্ঞাতনামা গ্রাম্য কবিভ্রাতার রচনাগুলিও এই গ্রামের লোকের সুখদুঃখের পক্ষে নিতান্ত আবশ্যক— আমার গানগুলি সেখানে কম হাস্যজনক নয়।

হাতি

 পতিসর, ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪। যে পারে বোট লাগিয়েছি এ পারে খুব নির্জন। গ্রাম নেই, বসতি নেই, চষা মাঠ ধূ ধূ করছে, নদীর ধারে ধারে খানিকটা ক’রে শুকনো ঘাসের মতো আছে—সেই ঘাসগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে গোটাকতক মোষ চ’রে বেড়াচ্ছে। আর আমাদের দুটো হাতি আছে, তারাও এ পারে চরতে আসে। তাদের দেখতে বেশ মজা লাগে, একটা পা উঠিয়ে ঘাসের গোড়ায় দুচার বার একটু-একটু ঠোকর মারে, তার পরে শুঁড় দিয়ে টান মারতেই বড়ো বড়ো ঘাসের চাপড়া একেবারে মাটিশুদ্ধ উঠে আসে, সেই চাপডাগুলো শুঁড়ে ক’রে দুলিয়ে দুলিয়ে ঝাড়ে, তার মাটিগুলো ঝরে ঝরে পড়ে যায়, তার পরে মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে খেয়ে ফেলে। আবার এক-এক সময় খেয়াল যায়, খানিকটা ধুলো গুঁড়ে ক’রে নিয়ে ফুঁ দিয়ে নিজের পেটে পিঠে সর্বাঙ্গে হুস করে ছড়িয়ে দেয়— এইরকম তো হাতির প্রসাধনক্রিয়া। বৃহৎ শরীর, বিপুল বল, শ্রীহীন আয়তন, অত্যন্ত নিরীহ— এই প্রকাণ্ড জন্তুটাকে দেখতে আমার বেশ লাগে। এর এই প্রকাণ্ডত্ব এবং বিশ্রীত্ব-র জন্যই যেন এর প্রতি একটা কী বিশেষ স্নেহের উদ্রেক হয়— এর সর্বাঙ্গের অসৌষ্ঠব থেকে এ-কে একটা মস্ত শিশুর মতো মনে হয়। তা ছাড়া জন্তুটা বড়ো উদার প্রকৃতির, শিব ভোলানাথের মতো, যখন