পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৬
সংকলন

নির্বিকার, তাহার মুখ দেখিয়া কিছুমাত্র চিনিবার জো নাই, লেখকটি কেমন, তাহার বিদ্যাবুদ্ধির দৌড় কত। আমার বন্ধু অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া আসিয়া কহিলেন, “একজন বি-এ তোমার এই লেখার জবার লিখিতেছেন!” বি-এ শুনিয়া আমার আর বাক্যস্ফূর্তি হইল না। বি-এ! শিশুকালে সত্য যেদিন বারান্দা হইতে পুলিস্‌ম্যান্‌কে ডাকিয়াছিল সেদিন আমার যে দশা, আজো আমার সেইরূপ। আমি চোখের সামনে স্পষ্ট দেখিতে লাগিলাম, খণ্ডকাব্য গীতিকাব্য সম্বন্ধে আমি যে-কীর্তিস্তম্ভ খাড়া করিয়া তুলিয়াছি বড়ো বড়ো কোটেশনের নির্মম আঘাতে তাহা সমস্ত ধুলিসাৎ হইয়াছে এবং পাঠকসমাজে আমার মুখ দেখাইবার পথ একেবারে বন্ধ। ‘কুক্ষণে জনম তোর রে সমালোচনা’। উদ্বেগে দিনের পর দিন কাটিতে লাগিল। কিন্তু বি-এ সমালোচক বাল্যকালের পুলিস্‌ম্যান্‌টির মতোই দেখা দিলেন না।

স্বাদেশিকতা

 স্বদেশের প্রতি পিতৃদেবের যে-একটি আন্তরিক শ্রদ্ধা তাঁহার জীবনের সকল প্রকার বিপ্লবের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ ছিল তাহাই আমাদের পরিবারস্থ সকলের মধ্যে একটি প্রবল স্বদেশপ্রেমের সঞ্চার করিয়া রাখিয়াছিল। বস্তুত সে সময়টা স্বদেশপ্রেমের সময় নয়। তখন শিক্ষিত লোকে দেশের ভাষা এবং দেশের ভাব উভয়কেই দূরে ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। আমাদের বাড়িতে দাদারা চিরকাল মাতৃভাষার চর্চা করিয়া আসিয়াছেন। আমার পিতাকে তাঁহার কোনো নূতন আত্মীয় ইংরেজিতে পত্র লিখিয়াছিলেন, সে-পত্র লেখকের নিকটে তখনি ফিরিয়া আসিয়াছিল।

 আমাদের বাড়ির সাহায্যে হিন্দুমেলা বলিয়া একটি মেলা সৃষ্টি হইয়াছিল। নবগোপাল মিত্র মহাশয় এই মেলার কর্মকর্তারূপে