পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬২
সংকলন

আমাদের স্পর্শ করল না। এই ঝড়ে আমাদের সঙ্গী আর-একটা জাহাজের প্রধান মাস্তুল বিদীর্ণ হয়েছে শুনলুম। মানুষ যে বাঁচে এই আশ্চর্য।


 ৫ জ্যৈষ্ঠ। এই কয়দিন আকাশ এবং সমুদ্রের দিকে চোখ ভ’রে দেখছি আর মনে হচ্ছে, অন্তরের রঙ তো শুভ্র নয়, তা কালো কিম্বা নীল। এই আকাশ খানিক দূর পর্যন্ত আকাশ অর্থাৎ প্রকাশ, ততটা সে সাদা। তারপরে সে অব্যক্ত, সেইখান থেকে সে নীল। আলো যতদূর সীমার রাজ্য সেই পর্যন্ত; তারপরে অসীম অন্ধকার। সেই অসীম অন্ধকারের বুকের উপরে এই পৃথিবীর আলোকময় দিনটুকু যেন কৌস্তুভমণির হার দুলছে।

 এই প্রকাশের জগৎ, এই গৌরাঙ্গী, তার বিচিত্র রঙের সাজ প’রে অভিসারে চলেছে— ঐ কালোর দিকে, ঐ অনির্বচনীয় অব্যক্তের দিকে। বাঁধা নিয়মের মধ্যে বাঁধা থাকাতেই তার মরণ—সে কুলকেই সর্বস্ব ক’রে চুপ ক’রে বসে থাকতে পারে না, সে কুল খুইয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এই বেরিয়ে-যাওয়া বিপদের যাত্রা পথে কাঁটা, পথে সাপ, পথে ঝড় বৃষ্টি— সমস্তকে অতিক্রম ক’রে, বিপদকে উপেক্ষা ক’রে সে-যে চলেছে সে কেবল ঐ অব্যক্ত অসীমের টানে। অব্যক্তর দিকে, ‘আরো’র দিকে প্রকাশের এই কুল-খোয়ানো অভিসারযাত্রা— প্রলয়ের ভিতর দিয়ে, বিপ্লবের কাঁটাপথে পদে পদে রক্তের চিহ্ন এঁকে।

 কিন্তু কেন চলে, কোন্ দিকে চলে, ওদিকে তো পথের চিহ্ন নেই, কিছু তো দেখতে পাওয়া যায় না? না, দেখা যায় না, সব অব্যক্ত। কিন্তু শূন্য তো নয়— কেননা, ঐদিক থেকেই বাঁশির সুর আসছে। আমাদের চলা, এ চোখে দেখে চলা নয়, এ সুরের টানে চলা। যেটুকু চোখে দেখে চলি, সে তো বুদ্ধিমানের চলা— তার হিসাব আছে,