পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬৬
সংকলন

সকলের চেয়ে বড়ো ক’রে খাতির করে নি; সেইজন্যেই ওরা নয়নমনের আনন্দ।

 একটা জিনিস এখানে পথে ঘাটে চোখে পড়ে। রাস্তায় লোকের ভিড় আছে, কিন্তু গোলমাল একেবারে নেই। এরা যেন চেঁচাতে জানে না; লোকে বলে, জাপানের ছেলেরা-সুদ্ধ কাঁদে না। আমি এ-পর্যস্ত একটি ছেলেকেও কাঁদতে দেখি নি। পথে মোটরে ক’রে যাবার সময়ে মাঝে-মাঝে যেখানে ঠেলা-গাড়ি প্রভৃতি বাধা এসে পড়ে, সেখানে মোটরের চালক শান্তভাবে অপেক্ষা করে—গাল দেয় না, হাঁকাহাঁকি করে না। পথের মধ্যে হঠাৎ একটা বাইসিক্‌ল্ মোটরের উপরে এসে পড়বার উপক্রম করলে আমাদের দেশের চালক এ অবস্থায় বাইসিক্‌ল্‌ আরোহীকে অনাবশ্যক গাল না দিয়ে থাকতে পারত না। এ লোকটা ভ্রূক্ষেপ মাত্র করলে না। এখানকার বাঙালীদের কাছে গুনতে পেলুম যে, রাস্তায় দুই বাইসিক্‌লে, কিম্বা গাড়ির সঙ্গে বাইসিক্‌লের ঠোকাঠুকি হয়ে যখন রক্তপাত হয়ে যায়, তখনো উভয় পক্ষ চেঁচামেচি গালমন্দ না করে গায়ের ধুলো ঝেড়ে চলে যায়।

 আমার কাছে মনে হয়, এইটেই জাপানের শক্তির মূল কারণ। জাপানী বাজে চেঁচামেচি ঝগড়াঝাটি ক’রে নিজের বলক্ষয় করে না। প্রাণশক্তির বাজে খরচ নেই ব’লে প্রয়োজনের সময় টানাটানি পড়ে না। শরীরমনের এই শান্তি ও সহিষ্ণুতা, ওদের স্বজাতীয় সাধনার একটা অঙ্গ। শোকে দুঃখে, আঘাতে উত্তেজনায়, ওরা নিজেকে সংযত করতে জানে। সেইজন্যেই বিদেশের লোকেরা প্রায় বলে—জাপানীকে বোঝা যায় না, ওরা অত্যন্ত বেশি গূঢ়। এর কারণই হচ্ছে, এরা নিজেকে সর্বদা ফুটো দিয়ে, ফাঁক দিয়ে, গলে পড়তে দেয় না।