পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপানযাত্রী
৩৬৭

জাপানী কবিতা

 এই-যে নিজের প্রকাশকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করতে থাকা— এ ওদের কবিতাতেও দেখা যায়। তিন লাইনের কাব্য জগতের আর কোথাও নেই। এই তিন লাইনই ওদের কবি, পাঠক, উভয়ের পক্ষে যথেষ্ট। সেইজন্যেই এখানে এসে অবধি, রাস্তায় কেউ গান গাচ্ছে, এ আমি শুনি নি। এদের হৃদয় ঝরনার জলের মতো শব্দ করে না, সরোবরের জলের মতো স্তব্ধ। এ পর্যন্ত ওদের যত কবিতা শুনেছি সবগুলিই হচ্ছে ছবি-দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয়। হৃদয়ের দাহক্ষোভ প্রাণকে খরচ করে, এদের সেই খরচ কম। এদের অন্তরের সমস্ত প্রকাশ সৌন্দর্যবোধে। সৌন্দর্যবোধ জিনিসটা স্বার্থনিরপেক্ষ। ফুল, পাখি, চাঁদ, এদের নিয়ে আমাদের কাঁদা-কাটা নেই। এদের সঙ্গে আমাদের নিছক সৌন্দর্যভোগের সম্বন্ধ— এরা আমাদের কোথাও মারে না, কিছু কাড়ে না— এদের দ্বারা আমাদের জীবনে কোথাও ক্ষয় ঘটে না। সেইজনেই তিন লাইনেই এদের কুলোয়, এবং কল্পনাতেও এরা শান্তির ব্যাঘাত করে না।

 এদের একটা বিখ্যাত পুরোনো কবিতার নমুনা দেখলে আমার কথাটা স্পষ্ট হবে:

পুরোনো পুকুর,
ব্যাঙের লাফ,
জলের শব্দ।

 ব্যস। আর দরকার নেই। জাপানী পাঠকের মনটা চোখে ভরা। পুরোনো পুকুর মানুষের পরিত্যক্ত, নিস্তব্ধ, অন্ধকার। তার মধ্যে একটা ব্যাঙ লাফিয়ে পড়তেই শব্দটা শোনা গেল। শোনা গেল—এতে বোঝা যাবে পুকুরটা কী রকম স্তব্ধ। এই পুরোনো পুকুরের ছবিটা