পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার মিলন
৩৫

তোমার চলবে, ওখান থেকে আমি আড়ালে দাঁড়ালুম; একদিকে রইল আমার বিশ্বের নিয়ম, আরেক দিকে রইল তোমার বুদ্ধির নিয়ন; এই দুয়ের যোগে তুমি বড়ো হও; জয় হোক তোমার, এ রাজ্য তোমারই হোক— এর ধন তোমার, অস্ত্র তোমারই।” এই বিধিদত্ত স্বরাজ যে গ্রহণ করেছে অন্য সকলরকম স্বরাজ সে পাবে, আর পেয়ে রক্ষা করতে পারবে।

 কিন্তু, নিজের বুদ্ধিবিভাগে যে লোক কর্তাভজা, পোলিটিকাল বিভাগেও কর্তাভজা হওয়া ছাড়া তাদের আর গতি নেই। বিধাতা স্বয়ং যেখানে কর্তৃত্ব দাবি করেন না, সেখানেও যারা কর্তা জুটিয়ে বসে, যেখানে সম্মান দেন, সেখানেও যারা আত্মাবমাননা করে, তাদের স্বরাজে রাজার পর রাজার আমদানি হবে, কেবল ছোট ঐ “স্ব”টুকুকে বাঁচানোই দায় হবে।

 এই পর্যন্ত এগিয়ে একটা কথায় এসে মন ঠেকে যায়। সামনে এই প্রশ্নটা দেখা দেয়, “সব মানলেম, কিন্তু পশ্চিমের যে-শক্তিরূপ দেখে এলে তাতে কি তৃপ্তি পেয়েছ।” না, পাইনি। সেখানে ভোগের চেহারা দেখেছি, আনন্দের না। অনবচ্ছিন্ন সাত মাস আমেরিকায় ঐশ্বর্যের দানবপুরীতে ছিলেম। দানব মন্দ অর্থে বলছি নে, ইংরেজিতে বলতে হলে হয়তো বলতেম, titanic wealth। অর্থাৎ যে-ঐশ্বর্যের শক্তি প্রবল, আয়তন বিপুল। হোটেলের জানলার কাছে রোজ ত্রিশ-পঁয়ত্রিশতলা বাড়ির ভ্রূকুটির সামনে বসে থাকতেম আর মনে মনে বলতেম, লক্ষ্মী হলেন এক, আর কুরে হল আর— অনেক তফাত। লক্ষ্মীর অন্তরের কথাটি হচ্ছে কল্যাণ, সেই কল্যাণের দ্বারা ধন শ্রীলাভ করে। কুবেরের অন্তরের কথাটি হচ্ছে সংগ্রহ, সেই সংগ্রহের দ্বারা ধন বহুলত্ব লাভ করে। বহুলত্বের কোনো চরম অর্থ নেই। দুই দুগুণে চার, চার দুগুণে আট, আট দুগুণে ষোলো, অঙ্কগুলো ব্যাঙের মতো লাফিয়ে চলে— সেই লাফের পাল্লা কেবলই লম্বা হতে থাকে। এই