পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
সংকলন

লোভ যতই বাড়তে থাকে, মানুষকে মানুষ খাটো করতে ততই আর দ্বিধা করে না।

 ভক্তি নেই ব’লেই মানুষের বাঁধন দড়ির বাঁধন হয়, কিন্তু দড়ির বাঁধনের ঐক্যকে মানুষ সইতে পারে না, বিদ্রোহী হয়। পশ্চিমদেশে আজ সামাজিক বিদ্রোহ কালো হয়ে ঘনিয়ে এসেছে, একথা সুস্পষ্ট। ভারতে আচারের বাহ্য বন্ধনে যেখানে মানুষকে এক করতে চেয়েছে সেখানে সেই ঐক্যে সমাজকে নির্জীব করেছে, আর য়ুরোপে ব্যবহারের বাহ্য বন্ধনে যেখানে মানুষকে এক করতে চেয়েছে সেখানে সেই ঐক্যে সমাজকে সে বিশ্লিষ্ট করেছে।

 তাহলে চরিতার্থতা কোথায়। তার উত্তর একদিন ভারতবর্ষের ঋষিরা দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, চরিতার্থতা পরম একের মধ্যে। গাছ থেকে আপেল পড়ে— একটা, দুটো, তিনটে, চারটে। আপেল পড়ার অন্তবিহীন সংখ্যাগণনার মধ্যেই আপেল-পড়ার সত্যকে পাওয়া যায়, একথা যে বলে, প্রত্যেক সংখ্যার কাছে এসে তাকে তার মন ধাক্কা দিয়ে বলবে, ততঃ কিম্। তার দৌড়ও থামবে না, তার প্রশ্নের উত্তরও মিলবে না। কিছূ অসংখ্য আপেল-পড়া যেমনি একটি আকর্ষণ-তত্ত্বে এসে ঠেকে, অমনি বুদ্ধি খুশি হয়ে বলে ওঠে, বাস্, হয়েছে।

 এই তো গেল আপেল-পড়ার সত্য। মানুষের সত্যটা কোথায়। সেন্‌সস্ রিপোর্টে? এক দুই তিন চার পাঁচে? মানুষের স্বরূপপ্রকাশ কি অন্তহীন সংখ্যায়।

 তা নয়, এই প্রকাশের তত্ত্বটি উপনিষৎ বলেছেন:

যস্তু সর্বাণি ভূতানি আত্মন্যেবানুপশ্যতি
সর্বভূতেষু চাত্মানং ন ততো রিজুগুপ্‌সতে।

যিনি সর্বভূতকে আপনারই মতো দেখেন এবং আত্মাকে সর্বভূতের