পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
সংকলন

থাকে কালের অবকাশ, না থাকে ধ্যানের অবকাশ। এইরূপে নিজের কাছে অত্যন্ত অনভ্যস্ত হইয়া পড়াতে, কাজের একটু ফাঁক হইলেই মদ খাইয়া, প্রমোদে মাতিয়া, বলপূর্বক নিজের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইবার চেষ্টা ঘটে। নীরব থাকিবার, স্তব্ধ থাকিবার, আনন্দে থাকিবার সাধ্য আর কাহারও থাকে না।

 যাহারা শ্রমজীবী, তাহাদের এই দশা। যাহারা ভোগী, তাহারা ভোগের নব নব উত্তেজনায় ক্লান্ত। নিমন্ত্রণ, খেলা, নৃত্য, ঘোড়দৌড়, শিকার ও ভ্রমণের ঝড়ের মুখে শুষ্কপত্রের মতো দিনরাত্রি তাহারা নিজেকে আবর্তিত করিয়া বেড়ায়। যদি একমুহূর্তের জন্য তাহার প্রমোদচক্র থামিয়া যায়, তবে সেই ক্ষণকালের জন্য নিজের সহিত সাক্ষাৎকার তাহার পক্ষে অত্যন্ত দুঃসহ বোধ হয়।

 য়ুরোপের আদর্শ য়ুরোপকে কোথায় লইয়া যাইতেছে তাহা আমরা কিছুই জানি না। তাহা যে স্থায়ী নহে, তাহার মধ্যে যে অনেক বিনাশের বীজ অঙ্কুরিত হইয়া উঠিতেছে তাহা স্পষ্টই দেখা যায়। ভারতবর্ষ প্রবৃত্তিকে দমন করিয়া শত্রুহস্তে প্রাণত্যাগ করিয়াছে,—য়ুরোপ প্রবৃত্তিকে লালন করিয়া আত্মহত্যার উদ্যোগ করিতেছে। নিজদেশ ও পরদেশের প্রতি আমাদের আসক্তি ছিল না বলিয়া বিদেশীর নিকট আমরা দেশকে বিসর্জন দিয়াছি,— নিজদেশ ও পরদেশের প্রতি আসক্তি সযত্নে পোষণ করিয়া য়ুরোপ আজ কোন্ রক্তসমুদ্রের তীরে আসিয়া দাঁড়াইল। অস্ত্রে শস্ত্রে সর্বাঙ্গ কণ্টকিত করিয়া তুলিয়া তাহার এ কী বিকট মূর্তি। কী সন্দেহ ও কী আতঙ্কের সহিত য়ুরোপের প্রত্যেক রাজশক্তি পরস্পরের প্রতি ক্রূর কটাক্ষপাত করিতেছে। রাজমন্ত্রীগণ টিপিয়া টিপিয়া পরস্পরের মৃত্যু-চাল চালিতেছে; রণতরীসকল মৃত্যুবাণে পরিপূর্ণ হইয়া পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রে যম-দৌত্যে বাহির হইয়াছে। আফ্রিকায় এশিয়ায় য়ুরোপের ক্ষুধিত লুব্ধকগণ আসিয়া ধীরে ধীরে এক-এক পা