পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভারতবর্ষের ইতিহাস

 ইতিহাস সকল দেশে সমান হইবেই, এ কুসংস্কার বর্জন না করিলে নয়। যে-ব্যক্তি রথ্‌চাইল্‌ডের জীবনী পড়িয়া গেছে সে খ্রীষ্টের জীবনীর বেলায় তাঁহার হিসাবের খাতাপত্র ও আপিসের ডায়ারি তলব করিতে পারে; যদি সংগ্রহ করিতে না পারে, তবে তাহার অবজ্ঞা জন্মিবে এবং সে বলিবে, যাহার এক পয়সার সংগতি ছিল না, তাহার আবার জীবনী কিসের। তেমনি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় দফ্‌তর হইতে তাহার রাজবংশমালা ও জয়পরাজয়ের কাগজপত্র না পাইলে যাঁহারা ভারতবর্ষের ইতিহাস-সম্বন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়েন এবং বলেন, যেখানে পলিটিকস নাই, সেখানে আবার হিস্ট্রি কিসের, তাঁহারা ধানের খেতে বেগুন খুঁজিতে যান এবং না পাইলে মনের ক্ষোভে ধানকে শস্যের মধ্যে গণ্য করেন না। সকল খেতের আবাদ এক নহে, ইহা জানিয়া যে-ব্যক্তি যথাস্থানে উপযুক্ত শস্যের প্রত্যাশা করে, সে-ই প্রাজ্ঞ।

 যিশুখ্রীষ্টের হিসাবের খাতা দেখিলে তাঁহার প্রতি অবজ্ঞা জন্মিতে পারে, কিন্তু তাঁহার অন্য বিষয় সন্ধান করিলে খাতাপত্র সমস্ত নগণ্য হইয়া যায়। তেমনি রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে ভারতবর্ষকে দীন বলিয়া জানিয়াও অন্য বিশেষ দিক হইতে সে-দীনতাকে তুচ্ছ করিতে পারা যায়।

 ভারতবর্ষের প্রধান সার্থকতা কী, এ-কথার স্পষ্ট উত্তর যদি কেহ জিজ্ঞাসা করেন, সে-উত্তর আছে; ভারতবর্ষের ইতিহাস সেই উত্তরকেই সমর্থন করিবে। ভারতবর্ষের চিরদিনই একমাত্র চেষ্টা দেখিতেছি,