পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্পাদকীয় Գօչ ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণী ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশ্বরচন্দ্রকে সংস্থতশাস্ত্রে ব্যুৎপন্ন করিবার মানসে ১ জুন ১৮২৯ তারিখে কলিকাতা গবর্মেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে ভৰ্ত্তি করিয়া দেন। ঈশ্বরচন্দ্রের বয়স তখন ৯ বৎসর। এই সময়ে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যাপন করিতেন কুমারহট্টনিবাসী গঙ্গাধর তর্কবাগীশ । সংস্কৃত কলেজে প্রবেশের কথা ঈশ্বরচন্দ্র স্বয়ং এইরূপ লিখিয়া গিয়াছেন :-- “১৮২৯ খৃষ্টীয় শাকে, জুন মাসের প্রথম দিবসে, আমি কলিকাতাস্থ রাজকীয় সংস্কৃত বিদ্যালয়ে বিদ্যার্থিরূপে পরিগৃহীত হই । তৎকালে আমার বয়স নয় বৎসর। ইহার পূৰ্ব্বে আমার সংস্কৃতশিক্ষাব আরম্ভ হয় নাই। ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে প্রবিষ্ট হইয়া, ঐ শ্রেণীতে তিন বৎসর ছয় মাস অধ্যয়ন করি ... কুমারহট্রনিবাস পূজ্যপাদ গঙ্গাধব তর্কবাগীশ মহাশয় তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক ছিলেন । শিক্ষাদান বিষয়ে তর্কবাগীশ মহাশয়ের অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল । তৎকালে সকলে স্পষ্ট বাক্যে স্বীকার করিতেন, ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রের শিক্ষা বিষয়ে যেরূপ কৃতকাৰ্য্য হয়, অপর দুই শ্রেণীর ছাত্রের কোনও ক্রমে সেরূপ হয় না। বস্তুতঃ পূজ্যপাদ তর্কবাগীশ মহাশয় শিক্ষাদানকার্ষ্যে বিলক্ষণ দক্ষ, সাতিশয় যত্নবান, ও সবিশেষ পরিশ্রমশালী বলিয়া, অসাধারণ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিলেন ।”—“শ্লোকমঞ্জরী, বিজ্ঞাপন । ব্যাকরণ-শ্রেণীতে প্রবেশ করিবার দেড় বৎসর পরে ( অর্থাৎ, ১৮৩৭-৩১ সনের বার্ষিক পরীক্ষার পর ) ১৮৩১ সনের মার্চ মাস হইতে ঈশ্বরচন্দ্র মাসিক ৫২ করিয়া বৃত্তি লাভ করেন । শম্ভুচন্দ্র ‘বিদ্যাসাগরজীবনচরিতে" ( ৩য় সং, পু. ২৫ ) ভ্রমফ্রমে লিথিয়াছেন, ঈশ্বরচন্দ্র “কলেজে প্রবিষ্ট হইবার ছয় মাস পরে পরীক্ষোৰ্ত্তীর্ণ হইয়া, মাসিক ৫২ টাকা বৃত্তি পাইলেন।” কৃতী ছাত্রদিগকে কলিকাতায় বাসা-খরচের জঙ্ক এই বৃত্তি দেওয়া হইত। যাহারা বৃত্তি পাইত তাহাদিগকে “Pay student", এবং যাহারা বৃত্তি পাইত না তাহাদিগকে “out Student;" বলা হইত। এই সময় ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে ঈশ্বরচন্দ্রের সহপাঠী ছিলেন—মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রভৃতি । ঈশ্বরচন্দ্র ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে সাড়ে তিন বৎসর–১৮৩৩ সনের জানুয়ারি মাস পর্য্যস্ত, অধ্যয়ন করিয়াছিলেন । তিনি স্বয়ং লিখিয়াছেন :– “প্রথম তিন বৎসরে মুগ্ধবোধপাঠ সমাপ্ত করিয়া, শেয ছয় মাসে অমরকোষের মনুষ্যবৰ্গ ও ভটিকাব্যের পঞ্চম সর্গ পৰ্য্যস্ত পাঠ করিয়াছিলাম।”—“শ্লোকমঞ্জরী, বিজ্ঞাপন । ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ঈশ্বরচন্দ্র উপযুপিরি তিনটি বার্ষিক পরীক্ষায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করায় তিন বারই পারিতোধিক পাইয়াছিলেন। পারিতোষিকের পরিমাণ এইরূপ — ১৮৩০-৩১ সনের বার্ষিক পরীক্ষায় "আউট ষ্টডেণ্ট"রূপে ব্যাকরণ ও নগদ ৮ । ১৮৩১-৩২ সনের বার্ষিক পরীক্ষায়—আমরকোষ, উত্তররামচরিত ও মুদ্রারাক্ষস । ১৮৩২-৩৩ সনের বাধিক পরীক্ষায় ‘পে ষ্টুডেন্ট"রূপে নগদ ২২ । মদনমোহন তর্কালঙ্কার পাচ টাকা মূল্যের পুস্তক পাইয়াছিলেন ।