পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ, আমাদের সমাজে ইংরেজী শিক্ষা ও ইউরোপীয় প্রভাবের বিস্তার, দেশের সামাজিক আর্থিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থা, এক কথায় উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী জীবনের সকল দিক সম্বন্ধেই সে-যুগের সংবাদপত্রের মধ্যে বহু অমূল্য উপকরণ বিক্ষিপ্ত হইয়া রহিয়াছে । আবার উনবিংশ শতাব্দীতে র্যাহাদের আবির্ভাবে বঙ্গের ইতিহাস উজ্জল হইয়া উঠিয়াছিল তাহাদের জীবনচরিত সঙ্কলিত করিতে গেলেও সমসাময়িক সংবাদপত্রের সাক্ষ্য অপরিহার্ষ্য । সেকালের একখানি বিখ্যাত বাংলা সংবাদপত্র হইতে ঐতিহাসিকের প্রয়োজনীয় এইরূপ সমুদয় তথ্য সঙ্কলন করিয়া বৰ্ত্তমান গ্রন্থ রচিত হইয়াছে। এই সংবাদপত্রটির নাম ‘সমাচার দর্পণ । সে-যুগের বাংলা সংবাদপত্রের মধ্যে এই পত্রিকাখানি একক নহে। কিন্তু পুরাতন বাংলা সংবাদপত্র আজকাল এমনই দুষ্প্রাপ্য হইয়া উঠিয়াছে যে নানা স্থানে অনুসন্ধান করিয়াও একমাত্র ‘সমাচার দর্পণের প্রায় সকল সংখ্যা ও ‘সমাচার চন্দ্রিক, ‘বঙ্গদূত, ‘সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়’ পত্রের কতকগুলি খুচরা সংখ্যা ভিন্ন ১৮৪০ সনের পূৰ্ব্বেকার অন্য কোন সাময়িক পত্র আমি দেখিতে পাই নাই। স্বতরাং বৰ্ত্তমান পুস্তক সঙ্কলনে আমি এই কয়েকটি পত্রের মধ্যেই আবদ্ধ থাকিতে বাধ্য হইয়াছি। পাঠকেরা লক্ষ্য রাখিবেন, গ্রন্থমধ্যে যে-সকল তথ্য উদ্ধৃত হইয়াছে সে সমুদয়ই ‘সমাচার দর্পণ হইতে গৃহীত ; তবে ‘সমাচার দর্পণে সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিক হইতে বহু জ্ঞাতব্য তথ্য ও সংবাদ উদ্ধৃত হইত ; ‘সমাচার দর্পণে ধৃত অন্য পত্রিকার এইরূপ সংবাদের মধ্যে ষেগুলির ঐতিহাসিক মূল্য আছে তাহাও আমি গ্রন্থমধ্যে সন্নিবিষ্ট করিয়াছি। অন্য পত্রিকা হইতে সঙ্কলিত তথ্য পরিশিষ্টে স্থান পাইয়াছে। উদ্ধত অংশে সৰ্ব্বত্র মূলকে অনুসরণ করা হইয়াছে। সেজন্ত বানান ও ছেদের অনেক বিশেষত্ব লক্ষিত হইবে । বৰ্ত্তমানে এই সকল বানান ও ছেদের রীতি অপ্রচলিত হইলেও উহার পরিবর্তন আমি সঙ্গত মনে করি নাই। পরিশেষে বল প্রয়োজন, এই গ্রন্থ দুই খণ্ডে সম্পূর্ণ। প্রথম খণ্ডে ১৮১৮ হইতে ১৮৩০ সনের মধ্যবর্তী যুগ সংক্রান্ত সকল তথ্য সন্নিবিষ্ট হইয়াছে ; দ্বিতীয় খণ্ডে পরবর্তী দশ বৎসরের কথা আছে । পুরাতন বাংলা সংবাদপত্র এই গ্রন্থ পুরাতন বাংলা সংবাদপত্র হইতে সঙ্কলিত। স্বতরাং উহার ভূমিকায় সংবাদপত্র সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়োজন। বাংলা দেশের ইতিহাস-রচনার এই উপাদানের প্রতি বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দিবার সময় আসিয়াছে। বহু বাংলা সংবাদপত্র দুষ্প্রাপ্য হইয়া উঠিয়াছে।