পাতা:সংবাদপত্রে সেকালের কথা প্রথম খণ্ড.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪ ভূমিকা যেগুলি পাওয়া যায়, সেগুলিও অনেক সময়েই সম্পূর্ণ নহে। এই অবস্থায় কালবিলম্ব না করিয়া বিশেষভাবে অবহিত না হইলে, যে-উপাদানগুলি এখনও আছে সেগুলিও বিনষ্ট হইয়া যাইবে, উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালী-জীবন কিরূপ ছিল তাহা আর জানা যাইবে না। অষ্টাদশ শতাব্দী পৰ্য্যস্ত থাটি বাঙালী-জীবনের চিত্র যেমন অনুমানসাপেক্ষ হইয়া দাড়াইয়াছে, উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালীর ইতিহাসও তেমনই অনুমানসাপেক্ষ হইয়া দাড়াইবে । একে জলবায়ুর দোষে ও কীটাদির উৎপাতে এদেশে পুরাতন কাগজপত্র বেশী দিন টিকে না, তাহার উপর পূর্বপুরুষের কাৰ্য্যকলাপের নিদর্শনগুলি সযত্নে রক্ষা করিবার আগ্রহ আমাদের নাই। এই দুই কারণে পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বেকার ঘটনা সম্বন্ধে কোন দলিলপত্র বা পুস্তকাদি অনেক প্রসিদ্ধ বাঙালী পরিবারে এখন আর বড় দেখা যায় না । আমাদের নিজেদের অবহেলা ছাড়া এদেশে ঐতিহাসিক উপাদান সযত্নে রক্ষিত ন হইবার আরও একটি কারণ আছে। সকল দেশেই ব্যক্তি-বিশেষ ভিন্ন গবৰ্ম্মেন্টও ঐতিহাসিক উপাদান রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়া থাকেন। এদেশের ইংরেজ গবৰ্ম্মেণ্টও যে সে-চেষ্ট না করিয়াছেন তাহা নয়। তবে তাহারা প্রধানতঃ চেষ্টা করিয়াছেন তাহীদের নিজেদের কাৰ্য্যকলাপের নিদর্শন রাখিবার ; তাহীদের শাসনাধীনে বাঙালী কি করিল না-করিল, গৌণভাবে ভিন্ন মুখ্যভাবে সে ইতিহাস লিখিবার কোন উপাদান সংরক্ষণের চেষ্টা ইংরেজদের দ্বারা হয় নাই । সেজন্য সরকারী দলিলপত্রে ও সরকারী গ্রন্থাগারগুলিতে বাংলা দেশে ইংরেজের কার্যকলাপের যথেষ্ট বিবরণ আছে, কিন্তু ইংরেজ-শাসিত বাংলা দেশে বাঙালী কিভাবে জীবন কাটাক্টতেছিল, কি চিন্তা করিতেছিল, তাহার বড়-একটা প্রমাণ নাই। এই কারণে এদেশের প্রবহমান জীবনধারার চিহ্ন উদ্ধার করিয়া স্বকীয় ইতিহাস লিখিবার দায়িত্ব অামাদের আরও বেশী । এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলা হয়ত অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। অনেকের ধারণা আছে যে, ংবাদপত্রের বিবরণমাত্রই অকাট্য সত্য । আবার অনেকে বর্তমান কালের সংবাদপত্রের অসত্য প্রচারের অদ্ভূত ক্ষমতা দেখিয়া একেবারে বিপরীত সীমায় পৌছিয়া সিদ্ধান্ত করিয়া বসেন যে সংবাদপত্রের বিবরণ মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই দুই ধারণার কোনটাই যে ঠিক নয় তাহ বলাই বাহুল্য। ইতিহাস লিখিবার অন্ত উপাদানের মত সংবাদপত্রের মধ্যেও সত্য মিথ্যা দুই-ই আছে । দেশ কাল পাত্র বিবেচনা করিয়া সত্য মিথ্য যাচাই করিয়া লইবার দায়িত্ব ইতিহাসলেখকের। ঐতিহাসিক প্রমাণে মিথ্যা বা ভুলভ্রান্তি থাকিবার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কিন্তু ’ সে মিথ্যা বা ভুলভ্রান্তি নিপুণ ঐতিহাসিকের হাতে অতি সহজেই ধরা পড়ে । ইতিহাসের দলিলপত্র যাচাই করিয়া লইবার একটা বৈজ্ঞানিক অর্থাৎ যুক্তিতর্কের অনুমোদিত পদ্ধতি আছে । এই পদ্ধতি যে কত স্বন্ধ তাহ যিনি জানেন না, তিনিই সাধারণতঃ ইতিহাসের অপ্রকৃতত্ব সম্বন্ধে অত্যন্ত বেশী সংশয়বাদী হইয় পড়েন । সংবাদপত্রে সত্য অসত্য দুই-ই আছে। সে-সত্য পরীক্ষা করিয়া লইবার ভার