আদিকাণ্ড ] অন্ধক মুনির শাপ ঘটিল এখন। রামে না দেখিয়া মম না রহে জীবন II পুত্ৰশোকে মৃত্যু আজি জিল বিধাতা। রামে নাহি দেখি যদি মরন সৰ্ব্বথা ॥ দিবসে সকল দেখি ঘোর অন্ধকার । শ্রীরাম-লক্ষণে বুঝি না দেখিব আর ॥ এইমত কান্দে রাণী বেলা অবশেষে । হেনকালে দুই ভাই অযোধ্যা প্রবেশে | বনপুষ্পে ভূষিত ধনুক বাম হাতে। নাচিতে নাচিতে যান লক্ষণের সাথে | ভরত শক্রয় গিয়া কহে কৌশল্যারে। হের মাতা, আইলেন রাম পুরদ্বারে | তার মুখে এই বাক্য শুনিতে শুনিতে । বাহির হইলা রাণী শ্রীরামে দেখিতে | ধেয়ে দশরথ রাজা রামে করি বুকে । এক লক্ষ চুম্ব দিল তার চাদ মুখে ॥ অন্ধকের শাপ মনে করে ধুকধুক । কি জানি বা হ’ন কবে বিধাতা বিমুখ ৷ কৌশল্যা ধাইয়া গিয়া রামে কৈল কোলে । এক লক্ষ চুম্ব দিল বদন-কমলে। দরিদ্রের নিধি তুমি নয়নের তারা। পলকে প্রলয় ঘটে যদি হই হারা। ভরত শত্রুঘ্ন তবে দেখেন শ্রীরাম । দুই ভাই আসি রামে করিল প্রণাম। বায়ের আলয়ে রাম করিল ভোজন । রাজরাণী হইলেন সুস্থির তখন ॥ কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মধুর ভণিত (১)। শ্রীরামের অরণ্যবিহার সুললিত (২) || ዓፃ সীতাদেবীর বিবাহপণ জন্য হরের ধন্থঃ-প্রদান । সাত বৎসরের রাম অযোধ্যানগরে । লক্ষনী হোথা জন্মিলেন জনকের ঘরে। চাষের ভূমিতে কন্যা পায় রাজ-ঋষি । মিথিলা হইল আলো পরম রূপসী। অদ্ভুত সীতার রূপ-গুণ মনে মানি । এ সামান্য নহে কন্যা কমলা আপনি ৷ কন্যা-রূপ জনক দেখেন দিনে দিনে । উমা কি কমলা বাণী (৩) ভ্রম হয় তিনে ৷ হরিণী নয়নে কিবা শোভিত কজ্জল । তিলফুল যিনি তার নাসিক উজ্জ্বল। সুললিত দুই বাহু দেখিতে সুন্দর। সুধাংশু জিনিয়া রূপ অতি মনোহর । মুষ্টিতে ধরিতে পারি সীতার কাকালি । হিঙ্গুলে মণ্ডিত র্তার পায়ের অঙ্গুলি । অরুণ-বরণ (৪) তার চরণ-কমল । তাহাতে নূপুর বাজে শুনিতে কোমল । রাজহংসী ভ্রম হয় দেখিলে গমন । অমৃত জিনিয়া তার মধুর বচন (৫) | দশদিক্ আলো করে জানকীর রূপে । লাবণ্য নিঃসরে কত প্রতি লোমকূপে। সংসারের লোক এল সীতা দেখিবারে । দেখিয়া সীতার রূপ আপনা পাসরে । জনক ভাবেন মনে সীতা দিব কারে । সীতাযোগ্য বর নাহি দেখি এ সংসারে । পুরোহিত আনি রাজা কহেন বিশেষে । জানকীর যোগ্য বর পাব কোন দেশে | জানকীরে বিবাহ করিবে কোন জন। স্বর্গেতে করেন চিন্তা যত দেবগণ ॥ (১) ভণিত –ভণিতা ; কথা । (২) সুললিত --সুন্দর ; মনোরম। (৩ বাণী-সরস্বতী । (৪) অরুণ- --- বরণ—প্রজ্ঞাত স্বর্ষ্যের মত লালবর্ণ। (৫) অমৃত-মধুর বচন-সীতার কথাগুলি অতিশয় শ্রুতিসুখকর ।