পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
সোনার তরী

যতন করি কনক-সুতে গাঁথি
রতন-হারে বাঁধিয়া দিনু পাঁতি—
ঘুমের দেশে ঘুমায় রাজবালা,
তাহারি গলে পরায়ে দিনু মালা।

শান্তিনিকেতন
১৪ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯


সুপ্তোত্থিতা

ঘুমের দেশে ভাঙিল ঘুম, উঠিল কলস্বর।
গাছের শাখে জাগিল পাখি, কুসুমে মধুকর।
অশ্বশালে জাগিল ঘোড়া, হস্তীশালে হাতি।
মল্লশালে মল্ল জাগি ফুলায় পুন ছাতি।
জাগিল পথে প্রহরীদল, দুয়ারে জাগে দ্বারী,
আকাশে চেয়ে নিরখে বেলা জাগিয়া নরনারী।
উঠিল জাগি রাজাধিরাজ, জাগিল রানীমাতা।
কচালি আঁখি কুমার সাথে জাগিল রাজভ্রাতা।
নিভৃত ঘরে ধূপের বাস, রতন-দীপ জ্বালা,
জাগিয়া উঠি শষ্যাতলে শুধালো রাজবালা—
‘কে পরালে মালা!’

খসিয়া-পড়া আঁচলখানি বক্ষে তুলি নিল।
আপন-পানে নেহারি চেয়ে শরমে শিহরিল।
ত্রস্ত হয়ে চকিত চোখে চাহিল চারি দিকে—
বিজন গৃহ, রতন-দীপ জ্বলিছে অনিমিখে।
গলার মালা খুলিয়া লয়ে ধরিয়া দুটি করে
সোনার সুতে যতনে গাঁথা লিখনখানি পড়ে।
পড়িল নাম, পড়িল ধাম, পড়িল লিপি তার,
কোলের ’পরে বিছায়ে দিয়ে পড়িল শতবার।