পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
সোনার তরী

গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

চারি দিক হতে এল পণ্ডিতের দল—
অযোধ্যা কনোজ কাঞ্চী মগধ কোশল।
উজ্জয়িনী হতে এল বুধ-অবতংশ
কালিদাস কবীন্দ্রের ভাগিনেয়বংশ।
মোটা মোটা পুঁথি লয়ে উলটায় পাতা,
ঘন ঘন নাড়ে বসি টিকিসুদ্ধ মাথা।
বড়ো বড়ো মস্তকের পাকা শস্যখেত
বাতাসে দুলিছে যেন শীর্ষ-সমেত।
কেহ শ্রুতি, কেহ স্মৃতি, কেহ বা পুরাণ,
কেহ ব্যাকরণ দেখে, কেহ অভিধান।
কোনোখানে নাহি পায় অর্থ কোনোরূপ,
বেড়ে ওঠে অনুস্বর-বিসর্গের স্তূপ।
চুপ করে বসে থাকে, বিষম সংকট,
থেকে থেকে হেঁকে ওঠে— হিং টিং ছট্।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

কহিলেন হতাশ্বাস হবুচন্দ্ররাজ,
‘ম্লেচ্ছদেশে আছে নাকি পণ্ডিতসমাজ—
তাহাদের ডেকে আনো যে যেখানে আছে,
অর্থ যদি ধরা পড়ে তাহাদের কাছে।’
কটা—চুল নীলচক্ষু কপিশকপোল
যবন পণ্ডিত আসে, বাজে ঢাক ঢোল।
গায়ে কালো মোটা মোটা ছাঁটাছোঁটা কুর্তি—
গ্রীষ্মতাপে উষ্মা বাড়ে, ভারী উগ্রমূর্তি।
ভূমিকা না করি কিছু ঘড়ি খুলি কয়,
‘সতেরে। মিনিট মাত্র রয়েছে সময়,