পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১২৩

সেইমতো সিন্ধুতটে ধূলিমাখা দীর্ঘজটে
খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

একদা শুধালো তারে গ্রামবাসী ছেলে,
‘সন্ন্যাসীঠাকুর এ কী, কাঁকালে ওকি ও দেখি?
সোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে?’
সন্ন্যাসী চমকি ওঠে, শিকল সোনার বটে,
লোহা সে হয়েছে সোনা জানে না কখন।
এ কী কাণ্ড চমৎকার, তুলে দেখে বারবার,
আঁখি কচালিয়া দেখে— এ নহে স্বপন।
কপালে হানিয়া কর ব’সে পড়ে ভূমি-’পর,
নিজেরে করিতে চাহে নির্দয় লাঞ্ছনা—
পাগলের মতো চায়— কোথা গেল, হায় হায়,
ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাঞ্ছনা।
কেবল অভ্যাসমত নুড়ি কুড়াইত কত,
ঠন্‌ করে ঠেকাইত শিকলের ’পর—
চেয়ে দেখিত না, নুড়ি দূরে ফেলে দিত ছুঁড়ি,
কখন ফেলেছে ছুঁড়ে পরশপাথর।

তখন যেতেছে অস্তে মলিন তপন।
আকাশ সোনার বর্ণ, সমুদ্র গলিত স্বর্ণ,
পশ্চিম দিগ্বধূ দেখে সোনার স্বপন।
সন্ন্যাসী আবার ধীরে পূর্বপথে যায় ফিরে
খুঁজিতে নূতন করে হারানো রতন।
সে শকতি নাহি আর— নুয়ে পড়ে দেহভার,
অন্তর লুটায় ছিন্ন তরুর মতন।
পুরাতন দীর্ঘপথ প’ড়ে আছে মৃতবৎ
হেথা হতে কত দূর, নাহি তার শেষ।