পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১২৭

ব্যস্ত হয়ে ফিরে, যথেষ্ট না হয় মনে
যত বাড়ে বোঝা। আমি বলি, ‘এ কী কাণ্ড!
এত ঘট, এত পট, হাঁড়ি সরা ভাণ্ড,
বোতল বিছানা বাক্স, রাজ্যের বোঝাই
কী করিব লয়ে! কিছু এর রেখে যাই,
কিছু লই সাথে।’

সে কথায় কর্ণপাত
নাহি করে কোনোজন। ‘কী জানি দৈবাৎ
এটা ওটা আবশ্যক যদি হয় শেষে
তখন কোথায় পাবে বিভুঁই বিদেশে!
সোনামুগ সরুচাল সুপারি ও পান,
ও হাঁড়িতে ঢাকা আছে দুই-চারিখান
গুড়ের পাটালি; কিছু ঝুনা নারিকেল,
দুই ভাণ্ড ভালো রাই-সরিষার তেল,
আমসত্ত্ব আমচুর, সেরদুই দুধ;
এই-সব শিশি কৌটা ওষুধ-বিষুধ।
মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে—
মাথা খাও, ভুলিয়ে। না, খেয়ো মনে করে।’
বুঝিনু যুক্তির কথা বৃথা বাক্যব্যয়।
বোঝাই হইল উঁচু পর্বতের ন্যায়!
তাকানু ঘড়ির পানে, তার পরে ফিরে
চাহিনু প্রিয়ার মুখে, কহিলাম ধীরে
‘তবে আসি’। অমনি ফিরায়ে মুখখানি
নতশিরে চক্ষু-’পরে বস্ত্রাঞ্চল টানি
অমঙ্গল-অশ্রুজল করিল গোপন।

বাহিরে দ্বারের কাছে বসি অন্যমন
কন্যা মোর চারি বছরের। এতক্ষণ