পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৩৫

নিঃশব্দ নিস্তব্ধ শান্ত সম্মুখে চাহিয়া
বসিয়া থাকিতে চাও তাই রব প্রিয়া।
হেরিব অদূরে পদ্মা, উচ্চতটতলে
শ্রান্ত রূপসীর মতো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে
প্রসারিয়া তনুখানি সায়াহ্ন-আলোকে
শুয়ে আছে। অন্ধকার নেমে আসে চোখে
চোখের পাতার মতো। সন্ধ্যাতারা ধীরে
সন্তর্পণে করে পদার্পণ নদীতীরে
অরণ্যশিয়রে। যামিনী শয়ন তার
দেয় বিছাইয়া একখানি অন্ধকার
অনন্ত ভুবনে। দোঁহে মোরা রব চাহি
অপার তিমিরে। আর কোথা কিছু নাহি,
শুধু মোর করে তব করতলখানি;
শুধু অতি কাছাকাছি দুটি জন প্রাণী
অসীম নির্জনে। বিষণ্ণ বিচ্ছেদরাশি
চরাচরে আর সব ফেলিয়াছে গ্রাসি;
শুধু এক প্রান্তে তার প্রলয়মগন
বাকি আছে একখানি শঙ্কিত মিলন,
দুটি হাত, ত্রস্ত কপোতের মতো দুটি
বক্ষ দুরুদুরু; দুই প্রাণে আছে ফুটি
শুধু একখানি ভয়, একখানি আশা,
একখানি অশ্রুভরে নম্র ভালোবাসা।

আজিকে এমনি তবে কাটিবে যামিনী
আলস্যবিলাসে। অয়ি নিরভিমানিনী,
অয়ি মোর জীবনের প্রথম প্রেয়সী,
মোর ভাগ্যগগনের সৌন্দর্যের শশী,
মনে আছে, কবে কোন্ ফুল্ল যূথীবনে,