পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
সোনার তরী

বহুবাল্যকালে, দেখা হত দুইজনে
আধো-চেনাশোনা? তুমি এই পৃথিবীর
প্রতিবেশিনীর মেয়ে, ধরার অস্থির
এক বালকের সাথে কী খেলা খেলাতে
সখী, আসিতে হাসিয়া, তরুণ প্রভাতে
নবীন-বালিকা-মূর্তি— শুভ্রবস্ত্র পরি’,
ঊষার কিরণধারে সদ্যস্নান করি’,
বিকচ কুসুমসম ফুল্লমুখখানি
নিদ্রাভঙ্গে দেখা দিতে—নিয়ে যেতে টানি
উপবনে কুড়াতে শেফালি। বারে বারে
শৈশবকর্তব্য হতে ভুলায়ে আমারে,
ফেলে দিয়ে পুঁথিপত্র, কেড়ে নিয়ে খড়ি,
দেখায়ে গোপন পথ দিতে মুক্ত করি
পাঠশালা-কারা হতে; কোথা গৃহকোণে
নিয়ে যেতে নির্জনেতে রহস্যভবনে
জনশূন্য গৃহছাদে আকাশের তলে।
কী করিতে খেলা; কী বিচিত্র কথা বলে
ভুলাতে আমারে— স্বপ্নসম চমৎকার,
অর্থহীন, সত্য মিথ্যা তুমি জান তার।
দুটি কর্ণে দুলিত মুকুতা, দুটি করে
সোনার বলয়; দুটি কপোলের ’পরে
খেলিত অলক; দু’টি স্বচ্ছ নেত্র হতে
কাঁপিত আলোক নির্মলনির্ঝরস্রোতে
চূর্ণরশ্মি-সম। দৌঁহে দোঁহা ভালো ক’রে
চিনিবার আগে নিশ্চিন্ত বিশ্বাসভরে
খেলাধুলা ছুটাছুটি দুজনে সতত,
কথাবার্তা—বেশবাস বিধান বিতত।