পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৮৭

নান। লোকে নানা পেয়েছে রতন,
আমি আনিয়াছি করিয়া যতন
তোমার কণ্ঠে দেয়ার মতন
রাজকণ্ঠের মালা।’
এত বলি মালা শির হতে খুলি
প্রিয়ার গলায় দিতে গেল তুলি,
কবিনারী রোষে কর দিল ঠেলি—
ফিরায়ে রহিল মুখ।
মিছে ছল করি মুখে করে রাগ;
মনে মনে তার জাগিছে সোহাগ,
গরবে ভরিয়া উঠে অনুরাগ,
হৃদয়ে উথলে সুখ!
করি ভাবে বিধি অপ্রসন্ন,
বিপদ আজিকে হেরি আসন্ন;
বসি থাকে মুখ করি বিষণ্ণ
শূন্যে নয়ন মেলি।
কবির ললনা আধখানি বেঁকে
চোরা কটাক্ষ চাহে থেকে থেকে—
পতির মুখের ভাবখানা দেখে
মুখের বসন ফেলি
উচ্চকণ্ঠে উঠিল হাসিয়া,
তুচ্ছ ছলনা গেল সে ভাসিয়া,
চকিতে সরিয়া নিকটে আসিয়া
পড়িল তাহার বুকে;
সেথায় লুকায়ে হাসিয়া-কাঁদিয়া
কবির কণ্ঠ বাহুতে বাঁধিয়া
শতবার করি আপনি সাধিয়া
চুম্বিল তার মুখে।