পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
বিদায়-অভিশাপ

কচ। আজি পূর্ণ কৃতার্থ জীবন। কোনো ঠাঁই 
মোর মাঝে কোনো দৈন্য কোনো শূন্য নাই
সুলক্ষণে।
দেবযানী। তুমি সুখী ত্রিজগৎ-মাঝে। 
যাও তবে ইন্দ্রলোকে আপনার কাজে
উচ্চশিরে গৌরব বহিয়া। স্বর্গপুরে
উঠিবে আনন্দধ্বনি, মনোহর সুরে
বাজিবে মঙ্গলশঙ্খ, সুরাঙ্গনাগণ
করিবে তোমার শিরে পুষ্প বরিষন
সদ্যছিন্ন নন্দনের মন্দারমঞ্জরী।
স্বর্গপথে কলকণ্ঠে অপ্সরী কিন্নরী
দিবে হুলুধ্বনি। আহা বিপ্র, বহু ক্লেশে
কেটেছে তোমার দিন বিজনে বিদেশে
সুকঠোর অধ্যয়নে। নাহি ছিল কেহ
স্মরণ করায়ে দিতে সুখময় গেহ,
নিবারিতে প্রবাসবেদনা। অতিথিরে
যথাসাধ্য পূজিয়াছি দরিদ্রকুটিরে
যাহা ছিল দিয়ে। তাই ব’লে স্বর্গসুখ
কোথা পাব, কোথা হেথা অনিন্দিত মুখ
সুরললনার। বড়ো আশা করি মনে,
আতিথ্যের অপরাধ রবে না স্মরণে
ফিরে গিয়ে সুখলোকে।
কচ সুকল্যাণ হাসে 
প্রসন্ন বিদায় আজি দিতে হবে দাসে।
দেবযানী। হাসি? হায় সখা, এ তো স্বর্গপুরী নয়। 
পুষ্পে কীটসম হেথা তৃষ্ণা জেগে রয়
মর্ম-মাঝে, বাঞ্ছা ঘুরে বাঞ্ছিতেরে ঘিরে
লাঞ্ছিত ভ্রমর যথা বারম্বার ফিরে