পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
চিত্রা

জন-ছয়-সাতে মিলি একসাথে পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা; মনে হল আশা, আরামে দিবস যাবে।—
কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা, কোথা বনমালী হরি!
কোথা হা হন্ত চিরবসন্ত, আমি বসন্তে মরি।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ।
আমি একা ঘরে; ব্যাধিখরশরে ভরিল সকল অঙ্গ।
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ, ‘কেষ্ট, আয় রে কাছে,
এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেশে প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।’
হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক, সে যেন পরম বিত্ত;
নিশিদিন ধ’রে দাঁড়ায়ে শিয়রে মোর পুরাতন ভৃত্য।

মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত।
বলে বার বার, ‘কর্তা, তোমার কোনো ভয় নাই, শুন—
যাবে দেশে ফিরে, মা-ঠাকুরানিরে দেখিতে পাইবে পুন।’
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম, তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ-’পরে।
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন, বন্ধ হইল নাড়ী।
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে, এত দিনে গেল ছাড়ি।
বহুদিন পরে আপনার ঘরে ফিরি সারিয়া তীর্থ।
আজ সাথে নেই চিরসাথি সেই মোর পুরাতন ভৃত্য।

 ১২ ফাল্গুন ১৩০১


দুই বিঘা জমি

শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভূঁই, আর সবি গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই,
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়োজোর মরিবার মতো ঠাঁই।’