পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৮
কথা

‘অলখ নিরঞ্জন’—
মহারব উঠে বন্ধন টুটে করে ভয়ভঞ্জন।
বক্ষের পাশে ঘন উল্লাসে অসি বাজে ঝঞ্ঝন্।
পঞ্জাব আজি গরজি উঠিল, ‘অলখ নিরঞ্জন!’

এসেছে সে এক দিন
লক্ষ পরানে শঙ্কা না জানে, না রাখে কাহারো ঋণ—
জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন।
পঞ্চনদীর ঘিরি দশ তীর এসেছে সে এক দিন।

দিল্লিপ্রাসাদকূটে
হোথা বারবার বাদশাজাদার তন্দ্রা যেতেছে ছুটে!
কাদের কণ্ঠে গগন মন্থে, নিবিড় নিশীথ টুটে—
কাদের মশালে আকাশের ভালে আগুন উঠেছে ফুটে?

পঞ্চনদীর তীরে
ভক্তদেহের রক্তলহরী মুক্ত হইল কি রে!
লক্ষ বক্ষ চিরে
ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাণ পক্ষীসমান ছুটে যেন নিজ নীড়ে।
বীরগণ জননীরে
রক্ততিলক ললাটে পরালো পঞ্চনদীর তীরে।

মোগল-শিখের রণে
মরণ-আলিঙ্গনে
কণ্ঠ পাকড়ি ধরিল আঁকড়ি দুইজনা দুইজনে—
দংশনক্ষত শ্যেনবিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ-সনে।
সেদিন কঠিন রণে
‘জয় গুরুজীর’ হাঁকে শিখবীর সুগভীর নিঃস্বনে।
মত্ত মোগল রক্তপাগল ‘দীন্ দীন্’ গরজনে।