পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯০
কাহিনী

তব মুগ্ধ ব্যবহারে; শিশুভুজপাশে
বন্দী হয়ে আছ পড়ি দেখে সবে হাসে
শত্রুদল দেশে দেশে; নীরব সংকোচে
বন্ধুগণ সংগোপনে অশ্রুজল মোছে।’
সোমক। ব্রাহ্মণের সেই তীব্র তিরস্কার শুনি 
অবাক হইল সভা। পাত্রমিত্র গুণী
রাজগণ প্রজাগণ রাজদূত সবে
আমার মুখের পানে চাহিল নীরবে
ভীত কৌতূহলে। রোষাবেশ ক্ষণতরে
উত্তপ্ত করিল রক্ত; মুহূর্তেক-পরে
লজ্জা আসি করি দিল দ্রুত পদাঘাত
দৃপ্ত রোষসর্প-শিরে। করি প্রণিপাত
গুরুপদে কহিলাম বিনম্র বিনয়ে
‘ভগবন্, শান্তি নাই এক পুত্র লয়ে;
ভয়ে ভয়ে কাটে কাল। মোহবশে তাই
অপরাধী হইয়াছি; ক্ষমা ভিক্ষা চাই।
সাক্ষী থাকে। মন্ত্রী সবে, হে রাজন্যগণ,
রাজার কর্তব্য কভু করিয়া লঙ্ঘন
খর্ব করিব না আর ক্ষত্রিয়গৌরব।’
ঋত্বিক্। কুণ্ঠিত আনন্দে সভা রহিল নীরব। 
আমি শুধু কহিলাম বিদ্বেষের তাপ
অন্তরে পোষণ করি, ‘এক-পুত্র-শাপ
দূর করিবারে চাও—পন্থা আছে তারো—
কিন্তু সে কঠিন কাজ, পার কি না পার
ভয় করি।’ শুনিয়া সগর্বে মহারাজ
কহিলেন, ‘নাহি হেন সুকঠিন কাজ
পারি না করিতে যাহা ক্ষত্রিয়তনয়,
কহিলাম স্পর্শি তব পাদপদ্মদ্বয়।’