পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্ষণিকা
৪০৫

শুধু অকারণ পুলকে
নদীজলে-পড়া আলোর মতন ছুটে যা ঝলকে ঝলকে
ধরণীর ’পরে শিথিল-বাঁধন
ঝলমল প্রাণ করিস যাপন,
ছুঁয়ে থেকে দুলে শিশির যেমন শিরীষফুলের অলকে
মর্মরতানে ভরে ওই গানে শুধু অকারণ পুলকে।


যথাস্থান

কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,
কোন্‌খানে তোর স্থান?
পণ্ডিতেরা থাকেন যেথায় বিদ্যেরত্ন-পাড়ায়,
নস্য উড়ে আকাশ জুড়ে কাহার সাধ্য দাঁড়ায়,
চলছে সেথায় সূক্ষ্ম তর্ক সদাই দিবারাত্র
পাত্রাধার কি তৈল কিম্বা তৈলাধার কি পাত্র,
পুঁথিপত্র মেলাই আছে মোহধ্বান্তনাশন,
তারি মধ্যে একটি প্রান্তে পেতে চাস কি আসন?
গান তা শুনি গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া কহে—
নহে, নহে, নহে।

কোন্‌ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,
কোন্ দিকে তোর টান?
পাষাণ-গাঁথা প্রাসাদ-’পরে আছেন ভাগ্যবস্তু,
মেহাগিনির মঞ্চ জুড়ি পঞ্চহাজার গ্রন্থ,
সোনার জলে দাগ পড়ে না, খোলে না কেউ পাতা,
অস্বাদিতমধু যেমন যুথী অনাঘ্রাতা,
ভৃত্য নিত্য ধুলা ঝাড়ে যত্ন পুরামাত্রা,
ওরে আমার ছন্দোময়ী, সেথায় করবি যাত্রা?