পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১৬
ক্ষণিকা

সোজাসুজি

হৃদয়-পানে হৃদয় টানে, নয়ন-পানে নয়ন ছোটে—
দুটি প্রাণীর কাহিনীটা এইটুকু বৈ নয়কো মোটে।
শুক্লসন্ধ্যা চৈত্রমাসে হেনার গন্ধ হাওয়ায় ভাসে,
আমার বাঁশি লুটায় ভূমে, তোমার কোলে ফুলের পুঁজি—
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।

বাসন্তীরঙ বসনখানি নেশার মতো চক্ষে ধরে,
তোমার গাঁথা যূথীর মালা স্তুতির মতো বক্ষে পড়ে।
একটু দেওয়া, একটু রাখা, একটু প্রকাশ, একটু ঢাকা,
একটু হাসি, একটু শরম— দুজনের এই বোঝাবুঝি
তোমার আমার এই-যে প্রণয় নিতান্তই এ সোজাসুজি।

মধুমাসের মিলন-মাঝে মহান্ কোনো রহস্য নেই,
অসীম কোনো অবোধ কথা যায় না বেধে মনে-মনেই।
আমাদের এই সুখের পিছু ছায়ার মতো নাইকো কিছু,
দোঁহার মুখে দোঁহে চেয়ে নাই হৃদয়ের খোঁজাখুঁজি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।

ভাষার মধ্যে তলিয়ে গিয়ে খুঁজি নে ভাই, ভাষাতীত।
আকাশ-পানে বাহু তুলে চাহি নে ভাই, আশাতীত।
যেটুকু দিই যেটুকু পাই তাহার বেশি আর-কিছু নাই—
সুখের বক্ষ চেপে ধরে করি নে কেউ যোঝাযুঝি।
মধুমাসে মোদের মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।

শুনেছিনু প্রেমের পাথার, নাইকো তাহার কোনো দিশা—
শুনেছিনু প্রেমের মধ্যে অসীম ক্ষুধা, অসীম তৃষা।
বীণার তন্ত্রী কঠিন টানে ছিঁড়ে পড়ে প্রেমের তানে,
শুনেছিনু প্রেমের কুঞ্জে অনেক বাঁকা গলিঘুঁজি।
আমাদের এই দোঁহার মিলন নিতান্তই এ সোজাসুজি।