পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২৬
ক্ষণিকা

তোমাদের সেই ছায়া-ঘেরা দিঘি না আছে তল,
কূলে কূলে তার ছেপে ছেপে আজি উঠেছে জল।
এ ঘাট হইতে ও ঘাটে তাহার
কথা বলাবলি নাহি চলে আর,
একাকার হল তীরে আর নীরে তালতলায়।
আজ ভোর হতে নাই গো বাদল, আয় গো আয়।

ঘাটে পঁইঠায় বসিবি বিরলে ডুবায়ে গলা,
হবে পুরাতন প্রাণের কথাটি নূতন বলা।
সে কথার সাথে রেখে রেখে মিল
থেকে থেকে ডেকে উঠিবে কোকিল,
কানাকানি ক’রে ভেসে যাবে মেঘ আকাশগায়।
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল, আয় গো আয়।

তপন-আতপে আতপ্ত হয়ে উঠেছে বেলা,
খঞ্জনদুটি আলস্যভরে ছেড়েছে খেলা।
কলস পাকড়ি আঁকড়িয়া বুকে
ভরা জলে তোরা ভেসে যাবি সুখে,
তিমিরনিবিড় ঘনঘোর ঘুমে স্বপনপ্রায়।
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল, আয় গো আয়।

মেঘ ছুটে গেল, নাই গো বাদল, আয় গো আয়—
আজিকে সকালে শিথিল কোমল বহিছে বায়।
পতঙ্গ যেন ছবিসম আঁকা
শৈবাল-’পরে মেলে আছে পাখা,
জলের কিনারে বসে আছে বক গাছের ছায়।
আজ ভোর থেকে নাই গো বাদল, আয় গো আয়।

শিলাইদহ
২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৭