পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশু
৪৫১

‘হারাই হারাই ভয়ে গো তাই  বুকে চেপে রাখতে যে চাই,
কেঁদে মরি একটু সরে দাঁড়ালে—
জানি নে কোন্ মায়ায় ফেঁদে বিশ্বের ধন রাখব বেঁধে
আমার এ ক্ষীণ বাহুদুটির আড়ালে।’


খেলা

তোমার কটিতটের ধটি কে দিল রাঙিয়া,
কোমল গায়ে দিল পরায়ে রঙিন আঙিয়া!
বিহান-বেলা আঙিনাতলে এসেছ তুমি কী খেলাছলে, 
চরণদুটি চলিতে ছুটি পড়িছে ভাঙিয়া।

কিসের সুখে সহাস-মুখে নাচ্ছি বাছনি,
দুয়ার-পাশে জননী হাসে হেরিয়া নাচনি!
তাথেই-থেই তালির সাথে কাঁকন বাজে মায়ের হাতে, 
রাখাল-বেশে ধরেছ হেসে বেণুর পাঁচনি।

ভিখারি ওরে, অমন করে শরম ভুলিয়া
মাগিস কিবা মায়ের গ্রীবা আঁকড়ি ঝুলিয়া!
ওরে রে লোভী, ভুবনখানি গগন হতে উপাড়ি আনি 
ভরিয়া দুটি ললিত মুঠি দিব কি তুলিয়া?

নিখিল শোনে আকুল-মনে নূপুর-বাজনা,
তপন শশী হেরিছে বসি তোমার সাজনা।
ঘুমাও যবে মায়ের বুকে আকাশ চেয়ে রহে ও মুখে, 
জাগিলে পরে প্রভাত করে নয়ন-মাজনা।

ঘুমের বুড়ি আসিছে উড়ি নয়ন-ঢুলানি—
গায়ের ’পরে কোমল করে পরশ বুলানি।
মায়ের প্রাণে তোমার লাগি জগৎ-মাতা রয়েছে জাগি, 
ভুবন-মাঝে নিয়ত রাজে ভুবন-ভুলানি।