পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কড়ি ও কোমল
৪৭

ঘরেতে দুরন্ত ছেলে করে দাপাদাপি—
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে, সৃষ্টি ওঠে কাঁপি।
মনে পড়ে মায়ের মুখে শুনেছিলেম গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।

মনে পড়ে সুয়োরানী দুয়োরানীর কথা,
মনে পড়ে অভিমানী কঙ্কাবতীর ব্যথা।
মনে পড়ে ঘরের কোণে মিটিমিটি আলো,
চারি দিকের দেয়াল জুড়ে ছায়া কালো কালো।
বাইরে কেবল জলের শব্দ ঝুপ্ ঝুপ্ ঝুপ্—
দস্যি ছেলে গল্প শোনে, একেবারে চুপ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে মেঘলা দিনের গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।

কবে বিষ্টি পড়েছিল, বান এল সে কোথা—
শিব-ঠাকুরের বিয়ে হল কবেকার সে কথা!
সেদিনও কি এমনিতরো মেঘের ঘটাখানা!
থেকে থেকে বাজ-বিজুলি দিচ্ছিল কি হানা!
তিন কন্যে বিয়ে করে কী হল তার শেষে!
না জানি কোন্ নদীর ধারে, না জানি কোন্ দেশে,
কোন্ ছেলেরে ঘুম পাড়াতে কে গাহিল গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।


গীতোচ্ছ্বাস

নীরব বাঁশরিখানি বেজেছে আবার।
প্রিয়ার বারতা বুঝি এসেছে আমার
বসন্তকানন-মাঝে বসন্তসমীরে।
তাই বুঝি মনে পড়ে ভোলা গান যত।