পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৪
খেয়া

কী বিচিত্র শোভা তোমার, কী বিচিত্র সাজ!
আমি মনে ভাবতেছিলেম এ কোন্ মহারাজ।

আজি শুভক্ষণে রাত পোহালো, ভেবেছিলেম তবে
আজ আমারে দ্বারে দ্বারে ফিরতে নাহি হবে।
বাহির হতে নাহি হতে কাহার দেখা পেলেম পথে,
চলিতে রথ ধনধান্য ছড়াবে দুই ধারে—
মুঠা মুঠা কুড়িয়ে নেব, নেব ভারে ভারে।

দেখি সহসা রথ থেমে গেল আমার কাছে এসে,
আমার মুখ’পানে চেয়ে নামলে তুমি হেসে।
দেখে মুখের প্রসন্নতা জুড়িয়ে গেল সকল ব্যথা,
হেনকালে কিসের লাগি তুমি অকস্মাৎ
‘আমায় কিছু দাও গো’ ব’লে বাড়িয়ে দিলে হাত।

মরি, এ কী কথা, রাজাধিরাজ, ‘আমায় দাও গো কিছু’—
শুনে ক্ষণকালের তরে রইনু মাথা-নিচু।
তোমার কিবা অভাব আছে ভিখারি ভিক্ষুকের কাছে!
এ কেবল কৌতুকের বশে আমায় প্রবঞ্চনা।
ঝুলি হতে দিলেম তুলে একটি ছোটো কণা।

যবে পাত্রখানি ঘরে এনে উজাড় করি— একি,
ভিক্ষা-মাঝে একটি ছোটো সোনার কণা দেখি!
দিলেম যা রাজ-ভিখারিরে স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে—
তখন কাঁদি চোখের জলে দুটি নয়ন ভ’রে,
তোমায় কেন দিই নি আমার সকল শূন্য করে?

কলিকাতা
৮ চৈত্র [১৩১২]


কুয়ার ধারে

তোমার কাছে চাই নি কিছু, জানাই নি মোর নাম,
তুমি যখন বিদায় নিলে নীরব রহিলাম।