পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
খেয়া
৪৯৯

হঠাৎ থেমে তোমার ’পরে নত হয়ে প’ড়ে
দেখিছে দর্পণ।

তীরের কর্ম সেরে আমি গায়ের ধুলো নিয়ে
নামি তোমার মাঝে।
এ কোন্ অশ্রুভরা গীতি ছল্‌ছলিয়ে উঠে
কানের কাছে বাজে!
ছায়ানিচোল দিয়ে ঢাকা মরণ-ভরা তব
বুকের আলিঙ্গন
আমায় নিল কেড়ে নিল সকল বাঁধা হতে—
কাড়িল মোর মন।

শিউলিশাখে কোকিল ডাকে করুণ কাকলিতে
ক্লান্ত আশার ডাক।
ম্লান’ ধূসর আকাশ দিয়ে দুরে কোথায় নীড়ে
উড়ে গেল কাক।
মর্মরিয়া মর্মরিয়া বাতাস গেল মরে
বেণুবনের তলে,
আকাশ যেন ঘনিয়ে এল ঘুমঘোরের মতো
দিঘির কালো জলে।

সন্ধ্যাবেলার প্রথম তারা উঠল গাছের আড়ে,
বাজল দূরে শাঁখ,
রন্ধ্রবিহীন অন্ধকারে পাখার শব্দ মেলে
গেল বকের ঝাঁক।
পথে কেবল জোনাক জ্বলে, নাইকো কোনো আলো,
এলেম যবে ফিরে।
দিন ফুরালো, রাত্রি এল, কাটল মাঝের বেলা
দিঘির কালো নীরে।

শান্তিনিকেতন
২৭ বৈশাখ ১৩১৬