পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কড়ি ও কোমল
৪৯

বাহু

কাহারে জড়াতে চাহে দুটি বাহুলতা—
কাহারে কাঁদিয়া বলে, ‘যেয়ো না, যেয়ো না!’
কেমনে প্রকাশ করে ব্যাকুল বাসনা,
কে শুনেছে বাহুর নীরব আকুলতা!
কোথা হতে নিয়ে আসে হৃদয়ের কথা,
গায়ে লিখে দিয়ে যায় পুলক-অক্ষরে।
পরশে বহিয়া আনে মরমবারতা,
মোহ মেখে রেখে যায় প্রাণের ভিতরে।
কণ্ঠ হতে উতারিয়া যৌবনের মালা
দুইটি আঙুলে ধরি তুলি দেয় গলে।
দুটি বাহু বহি আনে হৃদয়ের ডালা,
রেখে দিয়ে যায় যেন চরণের তলে।
লতায়ে থাকুক বুকে চির-আলিঙ্গন,
ছিঁড়ো না, ছিঁড়ো না দুটি বাহুর বন্ধন।


চরণ

দুখানি চরণ পড়ে ধরণীর গায়,
দুখানি অলস রাঙা কোমল চরণ।
শত বসন্তের স্মৃতি জাগিছে ধরায়,
শতলক্ষ কুসুমের পরশ-স্বপন।
শত বসন্তের যেন ফুটন্ত অশোক
ঝরিয়া মিলিয়া গেছে দুটি রাঙা পায়।
প্রভাতের প্রদোষের দুটি সূর্যলোক
অস্ত গেছে যেন দুটি চরণ-ছায়ায়।