পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা
৫৫৭

রেল-লাইনের ও পার থেকে
কাঙাল যখন ফেরে ভিক্ষা হেঁকে
বিনু আপন বাক্স খুলে
টাকা সিকে যা হাতে পায় তুলে
কাগজ দিয়ে মুড়ে
দেয় সে ছুঁড়ে ছুঁড়ে।
সবার দুঃখ দূর না হলে পরে
আনন্দ তার আপ্‌নারই ভার বইবে কেমন ক’রে?
সংসারের ওই ভাঙা ঘাটের কিনার হতে
আজ আমাদের ভাসান যেন চিরপ্রেমের স্রোতে—
তাই যেন আজ দানে ধ্যানে
ভরতে হবে সে যাত্রাটি বিশ্বের কল্যাণে।
বিনুর মনে জাগছে বারেবার,
নিখিলে আজ একলা শুধু আমিই কেবল তার,
কেউ কোথা নেই আর
শ্বশুর ভাশুর সামনে-পিছে ডাইনে-বাঁয়ে—
সেই কথাটা মনে করে পুলক দিল গায়ে।

বিলাসপুরের ইস্টেশনে বদল হবে গাড়ি;
তাড়াতাড়ি
নামতে হল। ছ ঘণ্টা কাল থামতে হবে যাত্রীশালায়।
মনে হল, এ এক বিষম বালাই।
বিনু বললে, ‘কেন, এই তো বেশ।’
তার মনে আজ নেই যে খুশির শেষ।
পথের বাঁশি পায়ে পায়ে তারে যে আজ করেছে চঞ্চলা—
আনন্দে তাই এক হল তার পৌঁছনো আর চলা।
যাত্রীশালার দুয়ার খুলে আমায় বলে,
‘দেখো দেখো, এক্কাগাড়ি কেমন চলে!