পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৮
পলাতকা

আর দেখেছ?— বাছুরটি ওই, আ মরে যাই, চিকন নধর দেহ,
মায়ের চোখে কী সুগভীর স্নেহ!
ওই যেখানে দিঘির উঁচু পাড়ি
সিসুগাছের তলাটিতে পাঁচিল ঘেরা ছোট্ট বাড়ি
ওই-যে রেলের কাছে—
ইস্টেশনের বাবু থাকে? আহা, ওরা কেমন সুখে আছে!’

যাত্রীঘরে বিছানাটা দিলেম পেতে;
বলে দিলেম, ‘বিনু, এবার চুপটি করে ঘুমোও আরামেতে।’
প্ল্যাট্‌ফরমে চেয়ার টেনে
পড়তে শুরু করে দিলেম ইংরেজি এক নভেল কিনে এনে।
গেল কত মালের গাড়ি, গেল প্যাসেঞ্জার—
ঘণ্টা তিনেক হয়ে গেল পার।
এমন সময় যাত্রীঘরের দ্বারের কাছে
বাহির হয়ে বললে বিনু, ‘কথা একটা আছে।’

ঘরে ঢুকে দেখি কে এক হিন্দুস্থানি মেয়ে
আমার মুখে চেয়ে
সেলাম ক’রে বাহির হয়ে রইল ধরে বারান্দাটার থাম।
বিনু বললে, ‘রুক্‌মিনি ওর নাম।
ওই-যে হোথায় কুয়োর ধারে সার-বাঁধা ঘরগুলি
ওইখানে ওর বাসা আছে, স্বামী রেলের কুলি।
তেরো-শো কোন্ সনে
দেশে ওদের আকাল হল; স্বামী স্ত্রী দুইজনে
পালিয়ে এল জমিদারের অত্যাচারে।
সাত বিঘে ওর জমি ছিল কোন্ এক গাঁয়ে কী-এক নদীর ধারে—’
বাধা দিয়ে আমি বললেম হেসে,
‘রুক্‌মিনির এই জীবন-চরিত শেষ না হতেই গাড়ি পড়বে এসে।