পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা
৫৬৩

প্রতি পলের গোপন কাঁটায় হল রক্তে মাখা।
মায়ের স্নেহ অন্তর্যামী, তার কাছে তো রয় না কিছুই ঢাকা;
মায়ের ব্যথা মেয়ের ব্যথা চলতে খেতে শুতে
ঘরের আকাশ প্রতি ক্ষণে হানছে যেন বেদনাবিদ্যুতে।

অটলতার গভীর গর্ব বাপের মনে জাগে—
সুখে দুঃখে দ্বেষে রাগে
ধর্ম থেকে নড়েন তিনি নাই হেন দৌর্বল্য,
তাঁর জীবনের রথের চাকা চলল
লোহায়-বাঁধা রাস্তা দিয়ে প্রতি ক্ষণেই,
কোনোমতেই ইঞ্চিখানেক এ দিক—ও দিক একটু হবার জো নেই।
তিনি বলেন, তাঁর সাধনা বড়োই সুকঠোর,
আর কিছু নয়, শুধুই মনের জোর—
অষ্টাবক্র জমদগ্নি প্রভৃতি সব ঋষির সঙ্গে তুল্য,
মেয়েমানুষ বুঝবে না তার মূল্য।

অন্তঃশীলা অশ্রুনদীর নীরব নীরে
দুটি নারীর দিন বয়ে যায় ধীরে।
অবশেষে বৈশাখে এক রাতে
মঞ্জুলিকার বিয়ে হল পঞ্চাননের সাথে।
বিদায়-বেলায় মেয়েকে বাপ ব’লে দিলেন মাথায় হস্ত ধরি,
‘হও তুমি সাবিত্রীর মতো, এই কামনা করি।’

কিমাশ্চর্যমতঃপরং, বাপের সাধন-জোরে
আশীর্বাদের প্রথম অংশ দু মাস যেতেই ফলল কেমন ক’রে—
পঞ্চাননকে ধরল এসে যমে;
কিন্তু মেয়ের কপাল-ক্রমে
ফলল না তার শেষের দিকটা, দিলে না যম ফিরে;
মঞ্জুলিকা বাপের ঘরে ফিরে এল সিঁদুর মুছে শিরে।