পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৬
পলাতকা

বাপ বললেন কঠিন হেসে, ‘তোমরা মায়ে ঝিয়ে
এক লগ্নেই বিয়ে কোরো আমার মরার পরে;
সেই কটা দিন থাকো ধৈর্য ধরে।’
এই বলে তাঁর গুড়গুড়িতে দিলেন মৃদু টান।
মা বললেন, ‘উঃ, কী পাষাণ প্রাণ,
স্নেহমায়া কিচ্ছু কি নেই ঘটে!’
বাপ বললেন, ‘আমি পাষাণ বটে।
ধর্মের পথ কঠিন বড়ো, ননীর পুতুল হলে
এত দিনে কেঁদেই যেতেম গ’লে।’
মা বললেন, ‘হায় রে কপাল, বোঝাবই বা কারে,
তোমার এ সংসারে
ভরা ভোগের মধ্যখানে দুয়ার এঁটে
পলে পলে শুকিয়ে মরবে ছাতি ফেটে
একলা কেবল ওইটুকু ওই মেয়ে—
ত্রিভুবনে অধর্ম আর নেই কিছু এর চেয়ে।
তোমার পুঁথির শুকনো পাতায় নেই তো কোথাও প্রাণ;
দরদ কোথায় বাজে সেটা অন্তর্যামী জানেন ভগবান।’
বাপ একটু হাসল কেবল; ভাবলে, ‘মেয়েমানুষ
হৃদয়তাপের ভাপে ভরা ফানুষ।
জীবন একটা কঠিন সাধন, নেই সে ওদের জ্ঞান।’
এই বলে ফের চলল পড়া ইংরেজি সেই প্রেমের উপাখ্যান।

দুখের তাপে জ্ব’লে জ্ব’লে অবশেষে নিবল মায়ের তাপ;
সংসারেতে একা পড়লেন বাপ।
বড়ো ছেলে বাস করে তার স্ত্রীপুত্রদের সাথে
বিদেশে পাটনাতে।
দুই মেয়ে তার কেউ থাকে না কাছে—