পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৮
পলাতকা

হয়ে নীরব নত
মঞ্জুলি সব সহ্য করে, সর্বদাই সে শান্ত
কাজ করে অক্লান্ত।
যেমন ক’রে মাতা বারম্বার
শিশু ছেলের সহস্র আবদার
হেসে সকল বহন করেন স্নেহের কৌতুকে,
তেমনি করেই সুপ্রসন্ন মুখে
মঞ্জুলি তার বাপের নালিশ দণ্ডে দণ্ডে শোনে—
হাসে মনে মনে।
বাবার কাছে মায়ের স্মৃতি কতই মূল্যবান
সেই কথাটা মনে ক’রে গর্বসুখে পূর্ণ তাহার প্রাণ—
‘আমার মায়ের যত্ন যে জন পেয়েছে একবার,
আর-কিছু কি পছন্দ হয় তার!’

হোলির সময় বাপকে সেবার বাতে ধরল ভারী।
পাড়ায় পুলিন করছিল ডাক্তারি,
ডাকতে হল তারে।
হৃদয়যন্ত্র বিকল হতে পারে,
ছিল এমন ভয়।
পুলিনকে তাই দিনের মধ্যে বারে বারেই আসতে যেতে হয়।
মঞ্জুলি তার সনে
সহজভাবে কইবে কথা যতই করে মনে
ততই বাধে আরো—
এমন বিপদ কারো
হয় কি কোনো দিন!
গলাটি তার কাঁপে কেন, কেন এতই ক্ষীণ,
চোখের পাতা কেন
কিসের ভারে জড়িয়ে আসে যেন।